পৈতৃক কোন ধরনের ভিটামাটি না থাকায় মাথা গোঁজার মত সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বনেই খুঁজে নেন আব্দুর রহমান। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর চাপার ইউনিয়নের পামওয়েল বাজারের পাশে বন বিভাগের জায়গায় ছোট্ট একটি কাঁচা ঘর নির্মাণ করে তিন সন্তানকে নিয়ে  দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন আব্দুর রহমান। ভিটামাটি সম্বলহীন আব্দুর রহমানের এক ছেলে দুই মেয়ে। দীর্ঘ  চল্লিশ বছর ধরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকিয়ে সন্তানদের মানুষ করেন আব্দুর রহমান। ছোটবেলা থেকে বাবার কষ্ট অনুভব করে আসছেন ছেলেমেয়েরা। ছেলে বড় হয়ে বাবার কষ্ট একটু লাঘব করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরী করে কিছু কিছু করে টাকা জমা করে। সে টাকা দিয়ে সরকারের দেওয়া সর্বশেষ আশ্রয়স্থল মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু একটু মেরামত করার জন্য যখনই কাজ শুরু করে, ঠিক তখনি কিছু মানুষ রুপি শকুনের নজর পড়ে আব্দুর রহমানের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলের দিকে। আব্দুর রহমানের মাথা গোঁজার শেষ ঠিকানাটুকু আব্দুর রহমানের কাছ থেকে কেঁড়ে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে একটি চক্র। বন বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় আব্দুর রহমানের  ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে মাথা  গোঁজার  শেষ ঠিকানা টুকু।
সাংবাদিকদের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আব্দুর রহমান বলেন আমার মত অসহায় স্বয় সম্বলহীন পৈত্রিক ভিটামাটিতে থাকার মত এক টুকরো জায়গা আমার নেই ।যদি থাকতো তাহলে আজকে ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে গহীন বনের মধ্যে এভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতাম না। আমার চেয়ে অনেক বড় বড় টাকা-পয়সাওয়ালা লোক রয়েছেন যারা বাবার পৈত্রিক ভিটা মাটি থাকা সত্বেও সরকারের শত শত বিঘা সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে আছেন। হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। অনেকে সরকারি জায়গা লিখিয়ে নিয়েছে নিজের নামেও। আমার অসহায় অবস্থা দেখে বন কর্মকর্তা স্যারদের করুণায় তাদের দয়ায় সরকারি জায়গায় আমাকে থাকার মত একটা ব্যবস্থা করে দেয়। আমি এই ছেলে মেয়েদের কে নিয়ে খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে এ জায়গার মধ্যে ছোট্ট একটি কাঁচা ঘর তৈরি করে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে থাকতেছি। কিছুদিন আগে আমার ছেলে কিছু টাকা পয়সা জোগাড় করে ঘরটা একটু মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করলে কিছু সাংবাদিক আসেন। তারা বলেন এখানে ঘর করতে হলে আমাদেরকে টাকা দিতে হবে। না হলে ঘর ভেঙ্গে দিবো। আমি বলি বাবা আমি গরিব মানুষ আমার থাকার মত কোন জায়গা নাই ,আমি খুব কষ্টে বন  কর্মকর্তা স্যারদের সহযোগিতায় এই সরকারি জায়গায় এই ছোট্ট একটি ঘর করে এই দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। কান্না জড়িত কন্ঠে আব্দুর রহমান বলে বাবা আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই  কেড়ে নিও না। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। বন কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে ভেঙ্গে দিল আব্দুর রহমানের মাথা গোঁজার শেষ সম্বল টুকু। এরপর থেকে গাছের নিচে ,পাড়া-প্রতিবেশীদের বাসা বাড়িতে  কখনো কোনো আঙিনায় রাত কাটাচ্ছেন আব্দুর রহমানের পরিবার।
এদিকে এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা বলেন আব্দুর রহমানের সর্বশেষ মাথা গোঁজার ঠাই টুকু  নজরে পড়ল । পামওয়েল বাজারের আশেপাশে এরকম আরো অনেক আছে যাদের অনেক কিছু থাকার পরেও সরকারের জায়গা বনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে হাজার হাজার টাকার মালিক হয়েছেন। করেছেন বসতবাড়ি। সে সকল বসতবাড়ি যদি ভাঙ্গা না হয় তাহলে অসহায় ভিটামাটি হীন আব্দুর রহমানের ঘর টুকু কেন ভাঙ্গা হলো ।যদি ভাঙতেই হয় তাহলে সরকারের বনের জায়গায় যতগুলা অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলো ভেঙ্গে ফেলুন। আর তা না হলে আব্দুর রহমানের মাথা গোঁজার শেষ সম্বল টুকু ফিরিয়ে দিন ।আমরা সরকারের কাছে করজোড় অনুরোধ করি অসহায় থাকার মত কোন জায়গা না থাকায় বন কর্মকর্তা তথা সরকারি কর্মকর্তাদের দয়ায় সরকারি জায়গায় আব্দুর রহমান যেভাবে তার ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বসবাস করে আসতেছিল তার  শেষ সম্বল টুকু কেড়ে নেবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *