
কেন্দুয়া প্রতিনিধিঃ
প্রায় দেড় মাস ধরে গো-খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গরুর খামারিগণ। ভূষি, ক্যাটল বুষ্টার, গম ইত্যাদির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরুকে খাদ্যের চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম খাওয়ানো হচ্ছে। ফলে গরু মোটা তাজা হতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার জন্য আগামী কুরবানি ঈদে চাহিদার পরিমাণ মাংস উৎপাদন না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে খামারিরা মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও উপজেলায় কৃষকদের গবাদি পশুসহ বহু মানুষ হাস-মুরগি, কবুতর, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু-পাখি পালন করে থাকেন। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলাতে নিবন্ধিত দেশী গাভীর খামার রয়েছে ১৫১টি, শংকর প্রজাতির গাভীর খামার রয়েছে ৭০টি, ষাঁড় গরুর খামার রয়েছে ১৪৪টি, ছাগলের খামার রয়েছে ১২০টি, ভেড়ার খামার রয়েছে ১৫টি, মুরগির ফার্ম ৭২৪টি, হাঁসের ফার্ম ১৭০টি এবং কবুতরের রয়েছে ১৩০টি ফার্ম। পশু-পাখির খুচরা খাদ্য বিক্রেতা কেন্দুয়া বাজারের বিধান পাল জানান, খাদ্যের শংকট নেই। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। যে কৃষকরা ২০কেজি খাদ্য নিতেন তিনি এখন নেন ১০কেজি। পাইকারী খাদ্য ব্যবসায়ী সুকন মিয়া জানান, দেড় দুই মাস আগে ৩৭ কেজি ভূষির প্রতি বস্তা ১৪/১৫ শত টাকা মূল্য ছিল, এখন সেটি ২ হাজার হতে ২২শত টাকা হয়েছে। ৩৭ কেজির কেটল বুষ্টার প্রতি বস্তার মূল্য ছিল ১ হাজার ৩৭ টাকা, এখন সেটি ১২শ ৫০টাকা বস্তা। বয়লালের মুরগি খাদ্য নারিশ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ছিল ২৪শ ৭৭টাকা বর্তমানে হয়েছে ২৯শ ৭৭ টাকা। হাঁসের জন্য লিয়ার প্রতি ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ২২শ ৬২ টাকা বর্তমানে হয়েছে ২৪শ ৮৭ টাকা। ৩৪ কেজি গমের বস্তা ছিল ১১শ টাকা বর্তমানে হয়েছে ১৩শ টাকা। লবন প্রতি ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ৫৫০ টাকা, এখন হয়েছে ৭৫০ টাকা। এভাবে মূল্য বৃদ্ধির কারণ কী জানতে চাইলে, ব্যবসায়ী সুকন মিয়া, বিধান পাল, লিটন, নূরুল ইসলাম জানান, গম উৎপাদন কম, বয়লার কুড়া (ভূষি) ও বুষ্টার উৎপাদন কম হওয়ায় ভূষিসহ অন্যান্য খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তারা মনে করেন। গরু খামারের মালিক উপজেলার পালড়া গ্রামের ফারুক মিয়া, ছিলিমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন, হারুলিয়া গ্রামের রেজাউল করিম, কৈলাটী গ্রামের আনিসুর রহমান রেনু মিয়া জানান, মাস দুয়েক ধরে খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। খামার চালাতে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছি। আগে যেখানে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হতো সেখানে এখন ৭/৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে প্রতিদিন। যে কারণে আমরা যারা ২০বস্তা খাদ্য নিতাম তা কমিয়ে এখন ১০/১২ বস্তা নিচ্ছি। আগামী কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে যে আশায় খামার করেছিলাম এখন মনে হচ্ছে প্রচুর লোকসান গুণতে হবে। দ্রুত খাদ্যের দাম না কমালে বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে- হয় এখনই গরু বিক্রি করে দিতে হবে, নতুবা জমি বিক্রি করে খামার চালাতে হবে। কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ভাস্কর চন্দ্র তালুকদার খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি এখন ঢাকাতে ট্রেনিং এ আছি। কেন্দুয়ায় এসে খামারিদের নিয়ে বৈঠক করব। খামারিদের বাঁচাতে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খামারীগন।