সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ:
গত বছরের ভালো দামে আশাবাদি কৃষক এবছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুকেছিলো। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছিলো উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরও। কিন্তু বাদ সেধেছে তাপদাহ ও অনাবৃষ্টি। পানির অভাবে পাট জাগ(পচানো)দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাজ তাদের কপালে। শেষ মুহুর্তেও অপ্রতুল বৃষ্টি নিয়ে বিপাকে পরা চাষিরা পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ জানান, কৃষকরা গত বছরের চেয়ে ৩০০ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন। এ বছর উপজেলায় ১৫ হাজার পাট চাষি তাদের ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। এর মধ্যে তোষা জাতের ৪ হাজার হেক্টর ও দেশী জাতের ১৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় চাষীরা পাট পচানো নিয়ে সমস্যায় আছেন। তবে তারা বিকল্প রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সরোজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার পাট চাষ বেশি হলেও জাগ দেয়ার প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় কৃষকরা চরম সমস্যায় রয়েছেন। অনেকে পাট জাগ দিতে পুকুর ডোবা ভাড়া নিচ্ছেন। অনেক চাষি দূরে ছোট খাল, বিল,নদী-নালা,ডোবায় পাট জাগ দিচ্ছেন। কেউ উন্মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিলেও পানি কমে যাওয়ার কারনে তারাও বিপাকে রয়েছেন। পানি সংকটে পরিবহন খরচ ও পুকুর ভাড়ার জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার পাট চাষি আবু বক্কর বলেন,বৃষ্টি না থাকায় খাল,বিল জলাশয়ে পানি নাই। পাট কেটে জমিতে গাদা করে রেখেছি,সেখানেও রোদে পুড়ে পাট শুকিয়ে যাচ্ছিলো। বাধ্য হয়ে এক বিঘা জমির পাট ২ হাজার টাকায় পুকুর ভাড়া নিয়ে সেখানে জাগ দিচ্ছি। একবিঘা জমিতে পাটচাষে খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা। তার সাথে পুকুর ভাড়া ও পরিবহন খরচ যোগ করেলে প্রায় ২০ হাজার টাকায় ঠেকেছে। প্রতি বিঘায় গড় ফলন ৮মন। প্রতিমন পাটের বর্তমান বাজার দর ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এদামে পাট বিক্রি করলে তাদের খুব বেশি লাভ হবে না।
একই মহল্লার পুকুর মালিক ঠান্টু প্রামানিক ও নজিবর রহমান জানান,কৃষকদের অনুরোধে তারা বিঘাপ্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় প্রতি বিঘা পাট জাগ দিতে ভাড়া দিচ্ছেন। তারা জানান,পুকুরেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বৈদ্যুতিক কিংবা ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে তাদের নিজ খরচে। একারনে ভাড়ার পরিমানও বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান বলেন, উপজেলায় পাট চাষ এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। মাঠে পাটের অবস্থাও ভাল। এখন পাট কাটার সময় চলছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে উন্মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দেয়া নিয়ে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টির দেখা মিলছে। আশা করা যাচ্ছে সপ্তাহের মধ্যেই চাষীদের এ সমস্যা থাকবে না।