তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী তানোরে ফের প্রশিক্ষণের নামে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ (আরএমপি) বেকার যুবকদের পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সচেতন মহল এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।
জানা গেছে, মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকায় জেলা সিভিল সার্জন,
সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার (টিএইচও) অধীনে মাত্র ২১ দিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেয়া হবে পল্লী
চিকিৎসকের সনদ। গ্রামের সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের প্রলোভন দিয়ে এই
সনদ বাণিজ্য করে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও গুঞ্জন বইছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, তানোর উপজেলা সদর ও বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রীতিমত পোস্টারিং ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাম্য চিকিৎসকের সনদ দেয়া হবে বলে প্রচার চলছে। ভর্তি ও প্রশিক্ষণের স্থান তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,যোগাযোগের ঠিকানা মেসার্স হক ফার্মেসী, গোল্লাপাড়া বাজার, তানোর, রাজশাহী।
ভর্তির শেষ তারিখ ৩১ মে এবং প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু ১ জুন বলা হয়েছে, তবে এখানো ভর্তি নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, এক মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদে বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে বলা হয়েছে। আর প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো হচ্ছে এনাটমি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজী, গাইনি ও চক্ষুরোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, দন্ত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, মেডিশিন ও প্যাথলজী ক্লাশসহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্যাট্রিক্যাল ক্লাস নেয়া হবে। আরএমপি ‘গ্রাম ডাক্তার’ কোর্সের মেয়াদ ৬ মাস, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ। শর্ট ডিপ্লোমা-ইন-মেডিসিন
কোর্সের মেয়াদ এক বছর, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ এ
ছাড়াও এক মাসের বিশেষ কোর্স রয়েছে। তানোর উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান,
ইতিমধ্যে চক্রটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে লাখ লাখ
টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি জানাজানি হবার
পরে কিছুদিন আড়ালে থেকে আবারো তারা রাজশাহীর বিভিন্ন
উপজেলায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন,
যদি মাত্র ২১ দিনের প্রশিক্ষণে মানবদেহের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, তাহলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে
মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রী নেয়ার কি দরকার ? তিনি বলেন,
চিকিৎসকের প্রলোভন দিয়ে বেকারদের প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল মাত্র। কারণ এক মাসের প্রশিক্ষণে দেশে যতো ওষুধ কোম্পানী রয়েছে সেসব কোম্পানীর ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারণাই নিতে পারবেন না এক জন মানুষ, চিকিৎসা দেয়া তো পরের কথা। তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জে এরা চিকিৎসক সেজে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে।
খোঁজ নিয়ে গেছে, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে
এবং রুলার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ ‘আরএমপি’ এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। সংশ্লিষ্ট
উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য
কেন্দ্রের হলরুমে রবিবার ও সাপ্তাহিক সরকারি ছুুটি বাদে ওই এক মাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে মাত্র ২১ দিন এর বিনিময়ে প্রতিটি
প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে নেয়া হবে ৭ হাজার পাঁচশ’ টাকা করে। স্থানীয় মাহাবুর ও সবুর বলেন, প্রতিদিন এক ঘন্টা করে মাত্র ২১ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা চিকিৎসা দেবে। এটা শুধুমাত্র প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল মাত্র। তিনি বলেন, নাহিদুল ইসলাম ও আব্দুল হান্নান এর আগেও এই চক্রটিকে নিয়ে উপজেলায় কয়েকবার প্রশিক্ষণের কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের প্রলোভন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার সেজে বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজারে চিকিৎসা সেবা
দিচ্ছে না বুঝে না জেনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, এই চক্রের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল হান্নান প্রশিক্ষণের নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কারণ তিনি নিজেই কোনো চিকিৎসক নন অথচ ভিজিট নিয়ে রোগী দেখছেন।
এদিকে পরিচয় গোপণ রেখে এই প্রতিবেদক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমন্বয়কারি গ্রাম ডাক্তার আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে ও ১ জুন থেকে প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু হবে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণ চলাকালীন যেকোনো সময়ে ভর্তি হওয়া যায়। তিনি বলেন,আমরা তাদের কাছে থেকে ৭ হাজার পাঁচশ’ টাকা করে নিচ্ছি। বিনিময়ে হাতে-কলমে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা যাতে মানুষের সু চিকিৎসা করতে পারে তার জন্য পৃথক দুটি সনদপত্র দেয়া হবে। এ বিষয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) বার্নাবাস হাসদা
বলেন, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন তাদের এই প্রশিক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *