চলনবিল অধ্যাসিতু সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বর্ষার পানিতে প্রতিদিন নতুন নতুন নিমাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সেই সাথে জীবন-জীবিকার জন্য অভাবীরা এ সময় বেছে নেয় অন্য পেশা। মাছ ধরার এক প্রকার যন্ত্র যার নাম খলসুনি। আবার কেউ কেউ স্থানীয় ভাষায় ধুন্দী বা চাঁই বলে থাকে। যে যা নামেই ডাকুক না কেন মাছ ধরার এই যন্ত্র  তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। বাঁশ ও তালের আঁশ দিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। 
এ অঞ্চলের তৈরি খলসুনি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ হাট, গুল্টা হাট, রায়গঞ্জের নিমগাছীর হাট, সলঙ্গা হাট, চাটমোহর, ছাইকোলা হাট, মির্জাপুর হাট, নাটোরের গুরুদাশপুর হাট, চাচকৈড় হাটসহ অন্যান্য হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। এসব হাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রয়-বিক্রয় হয় খলসুনি। 
খলসুনি ব্যবসায়ী প্রসান্ত কুমার জানান, তাদের দাদার আমল থেকেই তারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। অনেকে নতুন করে আসছে এ পেশায়, তাই দিনদিন এর সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছেই।
ভাঙ্গুড়া থানার করতকান্দি গ্রামের আয়নাল হক জানান, তারা প্রথমে বাঁশ চিরে খিল তুলে চিকন করে। সেগুলো শুকিয়ে নেয়া হয় হালকা রোদে। পচানো তালের ডাগুরের আঁশ দিয়ে খিল বান দেয়া হয়। এসব কাজে গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরাও পরিবারকে সহায়তা করে থাকে।
গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় গ্রামের প্রদীপ কর্মকার জানান, তার গ্রামের প্রায় আড়াইশ’ পরিবার খলসুনি তৈরির কাজে জড়িত। আর আকারভেদে প্রতি জোড়া খলসুনির দাম ৫০০-৬০৭০০ টাকা। কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি। আকারের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় দাম। এক জোড়া খলসুনি তৈরিতে সময় লেগে যায় প্রায় দু’তিন দিন। উপকরণ বাবদ খরচ হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
উপজেলার নওগাঁ হাটে বিক্রী করতে আসা ব্যবসায়ী ফজল আহমেদ বলেন, হাটের ইজারাদাররা খাজনা বেশি নেয়ায় ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইজারাদারদের মাঝে মাঝে ঝগড়া বেধে যায়। 
খলসুনি ক্রেতা আনিসুর রহমান জানান, এ বছর চলনবিলে পানি আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকাসহ চলনবিলের মাঠ ডুবে যাচ্ছে।  সেই ক্ষেতে কাজ নেই, তাতে কী? জীবনযুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষগুলো হারতে নারাজ। তাই বর্ষাও পানিতে মাছ ধরার জন্য খলসুনি ক্রয় করছে অনেকোই। তারা খলসুনি দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *