সোহেল রানা বাগমারা প্রতিনিধি:

নওগাঁ নিয়ামতপুরে বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো: আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম , দুর্নীতিসহ নিয়োগ জালিয়াতির নানা অভিযোগ এনে মাউশিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হলে, অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ২০ মে ২০২২ ইং তারিখের প্রেরিত চিঠি যার স্বারক নম্বর ৩৭.০২.০০০০.১০৫.২৭.০১২.২২.২৪৩/১, মাউশির সহকারী পরিচালক মো: আ: কাদের স্বাক্ষরীত চিঠিতে তদন্তের দায়ীত্ব প্রদান করা হয়েছে নওগাঁ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মো: নাজমুল হাসান ও একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: জাকির হোসেন কে।আগামী ১৪ দিনের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলাহয়েছে।
ঐ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মো: এরশাদ আলীর লিখিত অভিযোগ এবং স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ২৮/০৬/২০১৫ তারিখের কলেজ পরির্দশক জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো: শামসুদ্দিন ইলিয়াসের প্রেরিত পত্রের অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়োগ র্বোড গঠন করে আমার বিষয় সহ মোট তিন বিষয়ের শিক্ষককে ৩১/০৮/২০১৫ তারিখে নিয়োগ দেওয়া হয়, প্রতিষ্ঠানটির ডিগ্রী শাখা নন এমপিও হবার কারনে ২০১৯ সাল অবধী আমার বেতন ভাতাদী হয়নি। এদিকে জুলাই ২০১৯ সালে এমপিওর অনুমতি পওয়ায় অধ্যক্ষ মো: আমজাদ হোসেন গোপনে মাধ্যমিক ও উচচ শিক্ষা অষ্ণল, রাজশাহী জেলা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আমার বেতন আবদেন দাখিল করেন। কিন্তু সেখানেই ঘটে যায় চরম বিপত্তি। ধরা পড়ে অধ্যক্ষের নিয়োগ জালিয়াতি।
ইতিমধ্যে পাল্টে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। নিয়োগের ক্ষমতা যখন এন.টি. আর.সি এর হাতে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে অর্থ লোভী অধ্যক্ষ । কেননা ইতিমধ্যে আরও পাঁচজন শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা গোপনে গ্রহন করেছেন। তাদের অবৈধ নিয়োগ বৈধ করার জন্য অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন আমার বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল চিঠি পত্র এবং রেজুলেশান টেম্পারিং করে যথাক্রমে নিয়োগ বোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির চিঠি, যার স্বারক নং. ০৭(র-৭০৭)জাতীয়বিঃ/কঃপঃ/২০৭০৯ তারিখ: ২৮/০৬/২০১৫ ইং এবং ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠি যার স্বারক নং ৩৯(ক)/স বিএমসিমক/২০১৫ তারিখ: ২৬/০৭/২০১৫ ইং,সাক্ষাৎকার বোর্ডের ফলাফল সীট,ও রেজুলেশান সহ সকল প্রকার কাগজ পত্র নকল করে ভূয়া পাঁচটি বিষয় সহ মোট আটটি বিষয় নিয়োগ উল্লেখ করে বেতন আবেদন প্রস্তুত করেন। আমার বৈধ বেতন চালুর জন্য আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস রাজশাহীতে দাখিল করার সময় এখানে ভূয়া নিয়োগ দর্শন বিষয়েরও বেতন আবেদন করেন। যার কারনে অদ্য বদি আটকে আছে আমার বেতন। আজ দির্ঘদিন যাবৎ আমি বিনা বেতনে অনাহরে অধ্যাহারে চাকুরী করে আসছি।
অধ্যক্ষের দাখিল করা বেতন আবেদনের অধিকাংশ কাগজ পত্র নকল। ২২/০৮/২০১৫ খ্রিঃ তারিখের মূল রেজুলেশন কাটা-কাটি ও ঘষামাজা দেখে সন্ধেহ হলে আমার ও দর্শন বিভাগের অপর এক শিক্ষকের বেতন আবেদন বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক। শিক্ষা অফিস থেকে অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের কাছে কৈফিয়ত তলফ করা হলে সুদীর্ঘ দিন তার জবাব দেন না। এক পর্যায়ে রাজশাহী আষ্ণলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক গত ২৭/১০/২০২১ খ্রিঃ তারিখে কলেজে গিয়ে তদন্ত করে অধ্যেক্ষের সকল জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অধ্যক্ষ আমজাদ পরবর্তীতে তার লিখিত ভাবে উত্তরে ভূল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও পরিচালক তা মেনে না নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। ইতি মধ্যে অধ্যক্ষের ভুল স্বীকার উক্তি সহ অনান্য তথ্য প্রমানের ১৯ পৃষ্ঠার এক সেট কাগজ সংবাদ কর্মীদের হাতে পৌছেছে। কিন্তু এই আইনানুগ ব্যবস্থার যে সুদীর্ঘ মেয়াদ তারই বা শেষ কোথাই? এমন আক্ষেপ করেছেন ভুক্তভোগী এরশাদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা। সেই সাথে এরশাদ আলী আরো বলেন, অধ্যক্ষ এতদিন আমাকে অনুরোধ করে আসছিলেন, আমি যেন এই ঘটনাগুলো কাউকে না বলি, কিন্তু বর্তমানে তিনি নানা ভাবে ভয়ভিতি ও চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন অপকৌশলে মিথ্যা যড়যন্ত্র করছেন। বর্তমানে আমি কলেজে যাওয়া আশা নিয়ে অনেক শঙ্কায় রয়েছি।
এই ঘটনা তদন্তের দায়ীত্ব প্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: নাজমূল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,মাউশির লিখিত তদন্তের দায়ীত্ব পেয়েছি, খুব শিঘ্রই তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে সেটা জানি কিন্তু তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এমন কোন চিঠি এখন পর্যন্ত আমি হাতে পাইনি। আমার কলেজের একজন শিক্ষকের বেতন আবেদন নিয়ে জটিলতা হয়েছে, খুব তাড়া – তাড়ি সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
উপাধ্যক্ষ রোকেয়া খাতুনের সাথে মুঠোফেনে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সভাপতি যতিন্দ্র মোহন প্রাং বলেন, প্রভাষক এরশাদ আলীর নিয়োগ অনেক আগের তার নিয়োগের ব্যপারে আমি তেমন কিছু জানিনা, তবে অধ্যক্ষ সাহেবকে আমি বলেছি তার বেতন যেন তাড়াতাড়ি করে দেওয়া হয়। তবে তদন্তের ব্যাপারে এ পর্যন্ত আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *