
পদ্মা সেতু চালুর পর দিন থেকেই দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় যাত্রীসেবা দেওয়া শুরু করবে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে উন্নতমানের ‘এসি বাস’ সার্ভিস দিয়েই এই চালু করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। ২৬ জুন থেকেই ঢাকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে কানেকটিভিটি চালু করার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই নিয়ে রেখেছে বিআরটিসি। রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থাকে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকেই এই বাস সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিআরটিসি সূত্র জানিয়েছে, শুরুতেই ঢাকার গুলিস্তান থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস চালু করা হবে। তবে চাহিদার প্রেক্ষিতে এটি মিরপুর, জোয়ারসাহারা ও কল্যাণপুর বিআরটিসি ডিপো থেকেও ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিআরটিসির কর্তৃপক্ষের। তবে সব কিছু নির্ভর করছে যাত্রীদের চাহিদার উপর।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে প্রথম দিন থেকেই ৬৭ টি এসি বাস দিয়ে পরিবহন সেবা চালু করবে বিআরটিসি। এরইমধ্যে সংস্থাটি প্রাথমিক রুটম্যাপ তৈরি করেছে। রবি-সোমবারের মধ্যেই রুট ম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।
সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আগে ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরি ঘাট পর্যন্ত যে গাড়ীটি খুলনার যাত্রীদের নিয়ে যেত সেগুলো তো থাকছেই। পদ্মা সেতু হয়ে। পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-বরিশাল এবং ঢাকা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে সরাসরি বাস যোগাযোগ চালু করবে বিআরটিসি। এরইমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটের বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া ও রুট হচ্ছে- ঢাকা-ভাঙ্গা-মাদারীপুর-বরিশালের ভাড়া ৪১২ টাকা, ঢাকা-রাজৈর-গোপালগঞ্জের ভাড়া ৫০৪ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনার ভাড়া ৬৪৯ টাকা, ঢাকা-জাজিরা-শরীয়তপুরের ভাড়া ২১৮ টাকা, ঢাকা-বরিশাল-পিরোজপুরের ভাড়া ৫৩৪ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট-পিরোজপুরের ভাড়া ৬২৮ টাকা, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালীর ভাড়া ৫০১ টাকা, ঢাকা-ভাঙ্গা-মাদারীপুরের ভাড়া ৩২৭ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা-সাতক্ষীরার ভাড়া ৬৩৩ টাকা, ঢাকা-ভাঙ্গা-ফরিদপুরের ভাড়া ২৮৮ টাকা, ঢাকা-মাদারীপুর-বরিশাল-ভোলা-চর ফ্যাশনের ভাড়া ৬৫৩ টাকা, ঢাকা-বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু-শরীয়তপুরের ভাড়া ২১৯ টাকা এবং ঢাকা-মাদারীপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটার ভাড়া ৬৯৪ টাকা হবে। এই ভাড়া নন এসি বাসের জন্য।
অবশ্য বিআরটিসি সূত্র বলছে, এসি বাসের ভাড়া একটু বেশি হতে পারে। তবে সবকিছু আগামী ২০ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা রুট ঠিক করেছি। কোন রুটে কতটা গাড়ী যাবে? কোন ডিপো থেকে যাবে সেটা সোমবার ফাইনাল করে দেবো। আগে রুট ঠিক করেছি।’
বিআরটিসি বাস পরিচালনের বিষয়ে সংস্থাটির জেনারেল ম্যানেজার (আইসিডব্লিউএস) মেজর মোক্তারুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলের জন্য রুট প্ল্যান চকআউট করেছি। প্রাথমিকভাবে এসি বাস দিয়ে সার্ভিস চালু করতে চাই। এরপর যাত্রীদের চাহিদার ভিত্তিতে নন এসির চিন্তা ভাবনা রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাস সার্ভিস চালু হলে রুট চূড়ান্ত ও পরিবহন কতটি লাগবে সবগুলো চূড়ান্ত করতে এক দুই মাস লাগবে। তবে প্রাথমিকভাবে ৬৫-৬৭টি এসি বাস চালু করব। ঢাকার গুলিস্তান ছাড়াও চাহিদার প্রেক্ষিতে আমাদের অন্যান্য ডিপো যেমন মিরপুর, জোয়ারসাহার, কল্যাণপুর থেকে চলাচল করতে পারবে। এসব নির্ভর করছে যাত্রীদের চাহিদার উপরে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৫ জুন সকালে ১০টায় বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন ২৬ জুন সকাল থেকেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি। ফেরিকে অতীত করে ওই দিন থেকেই প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দেবে ছোট-বড় যানবাহন। নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয় নানান প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে।