চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরকীয়ার জের ধরে স্বামীকে মিথ্যা যৌতুক মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যৌতুক না দেয়ার অভিযোগে মারধরের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ উল্লেখ করে মামলা করেছেন এক গৃহবধূ। ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দেয়ার পর বারবার নোটিশ করলেও শালিসে উপস্থিত না হয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও বিয়ের বিভিন্ন নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় ৪ মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর কামারপাড়া গ্রামের নুরুল হোদার ছেলে মো. আব্দুল কাদের ও লক্ষীপুর স্কুলপাড়া গ্রামের তামান্না খাতুনের। বিয়ের পর থেকেই পরকীয়ার জেরে সংসারে নানারকম অশান্তি ও বিরোধ ছিল তাদের দাম্পত্য জীবনে।
পরে এনিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ প্রেরণ করেন আব্দুল কাদের। গত ২২ সেপ্টেম্বর বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তিনি এই নোটিশ পাঠান। তবে তা গ্রহণ না করে নোটিশ প্রেরণের ৪ দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর মারধরের মিথ্যা অভিযোগ এনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করেন তামান্না খাতুন।
ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের বলেন, আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট হয়রানিমূলক অভিযোগ দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি মামলায় আর ওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ার কারনে মারধরের যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট। কারন পারিবারিক বনিবনা না হওয়ার কারনে আমি আইনগতভাবে আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, আমি ২২ সেপ্টেম্বর তালাকনামা পাঠানোর ৪ দিন পর আমার বিরুদ্ধে আমার স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি তালাকনামা পাঠানোর ৪ দিন পর হাসপাতালে মারধরের অভিযোগ এনে ভর্তি হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পর গত ৩ অক্টোবর আদালতে মামলা দায়ের করেছে। এ থেকেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, মামলাটি সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও হয়রানিমূলক। কারন ঘটনা স্যতি হলে ঘটনার সময়ই মামলা দায়ের করত। এমনকি মিথ্যা মামলা দায়েরের পর মেয়ের ভাই ও তার পরিবার নানাভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
আব্দুল কাদের বলেন, মূলত অন্য এক যুবকের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক থাকার জেরেই আমার সাথে সংসার করতে রাজি নয় আমার স্ত্রী। বিষয়টি সে নিজের মুখে স্বীকারও করেছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আইনগতভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়েছি। আমার বাড়ি থেকে আসার সময় ৫ ভরি স্বর্ণালংকার রেখে আসার কথা বললেও তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। উল্টো বিয়ের সময় ও পরে আমার দেয়া একটি স্বর্ণের মালা, আংটি, কানের দুল, নাকের ফুল ও একটি রেডমি নট ১০ প্রো ফোন দেয়া ছিল তার কাছে। এখন সেগুলো না দেয়ার নানরকম পায়তারা করছে।
তিনি আরও জানান, স্ত্রীকে আমার দেয়া ফোনে আমার নিজস্ব ফেসবুক আইডি এ্যাকটিভ করা ছিল। নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশকে নিয়ে একটি বাজে মন্তব্য করে স্টোরি দেয়া হয়। যা আমার জন্য অত্যান্ত মানহানিকর। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই জানেন। আমার কাছে টাকা ধার নিলেও উল্টো বিয়ের প্রায় দেড় মাস পর আমার শাশুড়ী আরেক জামাইয়ের বাড়ি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। যা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমানয ব্যক্তিবর্গ অবহিত। এখন বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর সেই টাকা না দিতে আমার নামে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
এবিষয়ে বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ বলেন, সাংসারিক বনিবনা মা হওয়া নিয়ে ছেলে পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ দিয়েছিল। এনিয়ে উভয় পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার নোটিশ করা হয় সমাধানের জন্য। কিন্তু মেয়ে পক্ষ উপস্থিত হয়নি বা এর পক্ষে কারন দর্শানোর নোটিশও দেয়নি। আমার জানামতে, ছেলের কাছ থেকে ধারের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এই না দিতে ও তাদেরকে চাপের মধ্যে রাখতে নানারকম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দীনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি একটি প্রশিক্ষণে অফিসের বাইরে রয়েছি। আদালতের মাধ্যমে তদন্তভারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।