received 1000526511155387

মৌসুমী দাস, স্টাফ রিপোর্টারঃ

রাজশাহীর বাঘায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য ক্রেতাদের কার্ড জমা নিয়ে স্লিপের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবি পণ্য বিক্রিয়কালে কার্ডধারি অনেক ক্রেতাই পণ্য না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সহকারি কমিশনার(ভূমি) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুপুর ২টায় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেন। এ ঘটনা আরো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যানের দেওয়া স্লিপে পণ্য বিক্রি করছিলেন টিসিবির ডিলার জুনায়েদ আহমেদ সরকার। নির্ধারিত ৪৭০ টাকা মূল্যে প্রতি জনের কাছে ২ লিটার সোয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল ও ৫ কেজি চাল বিক্রি শুরু করেন তিনি। এসময় চেয়ারম্যানের কাছে কার্ড জমা দেওয়া অনেকেই স্লিপ না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সেখানে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় এর আগে ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্যর সাথে চেয়ারম্যানের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় জনরোষে পড়লে চেয়ারম্যানকে তার কার্যালয়ে নিরাপদে রাখা হয়।

বাউসা ইউনিয়নে ১ হাজার ৮৯২টি কার্ডধারির সংখ্যা রয়েছে বলে জানা গেছে। ছবি সংবলিত একজন কার্ডধারি ক্রেতা ৪৭০ টাকা জমা দিয়ে ২ লিটার সোয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল ও ৫ কেজি চাল ক্রয় করার কথা। সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফান কার্ড জমা নিয়ে স্লিপের মাধ্যমে ডিলারকে পণ্য বিক্রি করাতে বাধ্য করান। উপজেলা প্রশাসনের একজন তদারকি কর্মকর্তা মনিটরিং করার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ইউনিয়নটির ৬ নং ওয়ার্ডের হাসানুজ্জামান ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আড়পাড়া গ্রামের কালাম মন্ডল, শ্রীরাম পাড়ার শ্রীদাম মন্ডল, সমর কুমার মন্ডল, আজিজুল আলম, বাউসা, ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘা গ্রামের আয়ুব আলী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অমরপুর গ্রামের রনজনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন জানান, চেয়ারম্যান তাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ের কার্ড জমা নেন। মঙ্গলবার পণ্য ক্রয়ের জন্য পরিষদে আসেন। কিন্তু তাদের কার্ড কিংবা স্লিপ দেননি। এর আগে ডিলারের কাছে কার্ড জমা দিয়ে পণ্য ক্রয় করেছেন বলে জানান তারা।

এদিকে পণ্য ক্রয়ের জন্য স্লিপ নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে থাকা অনেকের মধ্যে ছিলেন রাহুল ও ইয়াসিন আরাফাত। ১৪ বছরের রাহুল এসেছিলেন তার চাচীর পণ্য কিনতে আর তার সমবয়সী ইয়াসিন আরাফাত পণ্য কিনতে আসেন তার ভাইয়ের নামে দেওয়া স্লিপে।

উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাকিম উদ্দীন জানান, তার ওয়ার্ডে পণ্য ক্রয়ের কার্ডধারি সংখ্যা ২২৬ টি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিলারের কাছে নিজেরা কার্ড জমা দিয়ে এর আগেও পণ্য ক্রয় করছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান সেই নিয়ম ভঙ্গ করে ইউনিয়নের সকল পণ্য ক্রেতাদের কার্ড জমা নিয়ে স্লিপ দেন। এতে করে কার্ডধারি অনেকেই স্লিপও পাননি। তার ওয়ার্ডেই অনেককেই স্লিপ দেওয়া হয়নি। তিনি এর প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ধাক্কা মারেন তাকে। পরে তার সাথে ধাক্কা ধাক্কি হয়েছে।

উপজেলা বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ তুফান বলেন, অনেকের কার্ডের সাথে ছবির মিল নাই। যাচাই বাছাইয়ের জন্য গত মাসে সবার কার্ড জমা নেওয়া হয়েছে। পরে কার্ড না দিয়ে স্লিপ দেওয়া হয়েছে। যাদের ছবির সাথে কিংবা জাতীয় পরিচয় পত্রের মিল পাওয়া যায়নি তাদের স্লিপ দেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে কেউ বাদ পড়তে পারে। এ নিয়ে ৪ নং ইউপি সদস্যের সাথে বাক-বিতন্ড হয়। তবে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা অস্বীকার করেছেন তিনি।

উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত টিসিবি ডিলার জুনায়েদ আহমেদ সরকারকে সেখানে পাওয়া যায়নি। সেখানে ছিলেন তার সহপাঠি লাল্টু হোসেন। তিনি জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্বাক্ষরিত স্লিপে প্রায় এক হাজার লোক জনের কাছে পণ্য বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, কার্ড জমা নিয়ে পণ্য বিক্রির নিয়ম রয়েছে। এর আগেও সেভাবেই বিক্রি করেছেন।

উপজেলা প্রশাসনের তদারকি কর্মকর্তা হৃদয় আহমেদ জানান, বিষয়টি তাৎক্ষনিক তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করেছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জুয়েল আহম্মেদ জানান, পরিস্থিতির কারণে সেখানে উপস্থিত হয়ে পণ্য বিক্রি স্থগিত করেছি। পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য,উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে কার্ডধারির সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৭৭ জন। পৌরসভায় মেয়র ও ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের সহায়তায় নিন্ম আয়ের লোক জনের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কার্ডধারী ভোক্তা ছাড়া অন্য কোন ভোক্তা ডিলারদের কাছে থেকে টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে পারবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *