রাউজান  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রাচীনকাল থেকে ভ্রমণ কিংবা স্থানান্তরজনিত কারণে অতিথিশালা বা সরাইখানা হতে উৎপত্তি আজকের আধুনিক রেস্তোরাঁ। ২০০৬ সালে এক জরিপে উঠে আসে পৃথিবীতে উচ্চ বিলাসিত প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার রেস্তোরাঁ আছে যেখানে প্রতি বছর প্রায় ২৯৮ বিলিয়ন ডলার লেনদেন করে। পাচক বা রাধুনী বা বাবুর্চি বা শেফ যে যাই বলুক একটি সম্মানজনক পেশা। ভার্চুয়াল জগতে শিক্ষার্থীরা এই পেশাকে বেছে নিচ্ছেন ক্যারিয়ারের সূচনা হিসেবে। তাই তো আজ বিশ্বে রাধুনী শিল্পে নতুন প্রজন্মের অনেকেই ক্যারিয়ার গঠন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বিশ্বে অনেক দেশে রাধুনী শিল্পে ডিপ্লোমা ও স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী অনেক রাধুনীসম্পর্কীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শেফ কর্মক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত হয় যুক্তরাজ্যে, তেমন একটি বিশ্ব বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লন্ডনের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে টপার হয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে চট্টগ্রামের ছেলে মোহাম্মদ আরাফাতুল ইসলাম। পরে নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে অর্জন করে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ব বিখ্যাত “গর্ডন রামসে রেস্তোরাঁয়” সু শেফ বা অ্যাসিস্ট্যান্ট শেফ মত স্বপ্নের কর্মজীবন, মূলত আধুনিক রান্নাঘরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ এটি।

আজ শুনবো তেমনি একজন বাংলাদেশের কৃতি সন্তানের বিখ্যাত হয়ে ওঠার গল্প। ব্রিটেনের টমি মিয়া বা আন্তর্জাতিকভাবে যাকে ব্রিটেনের “কারি কিং” হিসেবে পরিচিত সিলেটের মোহাম্মদ আজমান মিয়ার রাস্তা ধরে হাঁটছেন আরফাত, বিশ্ব বিখ্যাত গর্ডন রামসে রেস্তোরাঁ এই প্রথম কোন বাংলাদেশী হিসেবে সু শেফের দায়িত্ব আছেন তিনি। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সরফভাটা ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের বধুনী বাপের বাড়ির মোঃ আইয়ুব আলী ও সাজেদা বেগমের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ২য় সন্তান মোহাম্মদ আরফাতুল ইসলাম, বড় ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে মধ্যপ্রাচর দেশ ওমানে পাড়ি জমান। আরফাত বলেন, বাংলাদেশে বিএসসি কমপ্লিট করি ফুড এন্ড সেফটি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে, চট্টগ্রাম রেডিসন ব্লু রেস্টুরেন্টে কর্মজীবন শুরু করে এখান থেকেই অভিজ্ঞতার হাতেখড়ি নিয়ে এমএসসি জন্য পাড়ি জমাই ইউরোপের উত্তর আয়ারল্যান্ডে এখান থেকেই এমএসসি অধ্যয়ন করতে আবেদন করি বিশ্ব বিখ্যাত আলস্টার ইউনিভার্সিটিতে, পরে ২০২০ সালে উক্ত ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন পেয়ে যায় ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে উপর। আরফাত একজন শেফ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাই এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে শেফ ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে গভীর আগ্রহ ছিল তিনি জানতেন তার স্বপ্ন পূরণ করতে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাতে হবে। ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়ন কালে বুঝতে পেরেছেন বেলফাস্টের কোর্সটি সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে রয়েছে, তখন কোভিড ১৯ মহামারী আকার ধারণ করেছিল, কঠিন একটা সময় অতিবাহিত করেছি, মহামারীতে এই অসাধ্যকে সাধন করতে পড়াশুনার বিকল্প কিছুই নেই কারণ ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে জন্য এটি বিশ্বের এক নাম্বার ইউনিভার্সিটি।আরফাত বলেন, সেই দুর্বিষহ কোভিড ১৯ এর সময় চাকরি তো অনেক দূরের কথা মানুষের জীবন নিয়ে প্রশ্ন, ঐ সময়ও পড়াশুনার পাশাপাশি পার্ট টাইম একটি ইন্ডিয়ার রেস্টুরেন্টে কাজ করার সুযোগ হয়। তখনো আমি আমার লক্ষ্যে অবিচল ছিলাম ভবিষ্যতে আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই? দৃঢ় প্রত্যয় ছিল নিজেকে পৃথিবীর একজন অন্যতম শেফ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।বেলফাস্ট সিটির “মাইকেল ডিন” সাথে বাংলাদেশ থেকে পূর্ব পরিচিত ছিল বলেই ওনার সহযোগিতায় কোভিড ১৯ এর মাঝামাঝি সময় এসি মেরিরিয়ট হোটেলে চাকরি হয়। মেরিরিয়ট হোটেলে শেফের দায়িত্বে ছিলেন ফ্রান্সের নাম্বার ওয়ান শেফ “জন ক্রিস্টিপাল নোবেলি” ওনার আন্তরিক সহযোগিতায় নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ ও পড়াশোনা পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শেফে পরিণত হয়। এখানে কর্মরত অবস্থায় আমি আমার এমএসসি সম্পূর্ণ করি। পড়াশোনা শেষ করে মেরিরিয়ট হোটেলে চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন বড় বড় রেস্টুরেন্টে আবেদন করতে থাকে, এরই মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত লন্ডনের “গর্ডন রামসে রেস্তোরাঁয়” ইন্টারভিউর জন্য ডাক পায়, ট্রাইলে এসে খাবার বানিয়েছি, তারা টেস্ট করে আমাকে চাকরির অফার করে। এই ক্যারিয়ারে সবার স্বপ্ন থাকে “গর্ডন রামসে রেস্তোরাঁ” চাকরি। এই রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ সম্পন্ন শেফ ও ইংলিশ শেফরাও চাকরি পায়না আর আমি প্রথম একজন বাঙালি হিসেবে এই রেস্টুরেন্টে জয়েন করলাম। এর কিছুদিনের মধ্যে আমার কাজের দক্ষতার বিচার বিশ্লেষণ করে সু-শেফে পদোন্নতি হয়। আর এটাই পৃথিবীর মধ্যে কোন বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্ব বিখ্যাত “গর্ডন রামসে রেস্তোরাঁয়” একজন সু-শেফ।ইতোমধ্যে বৃটেনের গণমাধ্যম newsletter ও belfastlive পত্রিকায় “Ulster University graduate lands dream job with Gordon Ramsay” শিরোনামে আরাফাতের কৃতিত্ব প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সোসাল প্লাটফর্ম টুইটার ও ফেসবুকে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সহস্রাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী। আরাফাতের গল্প থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্জন করবে বাংলাদেশের জন্য সুনাম, লাল সবুজের পতাকা উছিয়ে ধরবে বিশ্বের বুকে। এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!