মোঃ আসিফ আহাম্মেদ জয়ঃ বাংলাদেশের দু’টি উল্লেখযোগ্য নদী পদ্মা এবং মহানন্দার ঠিক মোহনায় গোদাগাড়ী। মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হক এই পুন্যভুমি গোদাগাড়ীর সন্তান ছিলেন ।
রোববার ২১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ সকাল ১০টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর।
মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হক স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য গুনাবলি রেখে গেছেন।
মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হক দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময় আমিনুল হক তখন প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। মিছিলে অংশ নিতে স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়েন। পুলিশ ধর-পাকড় শুরু করলে আরও অনেকের মতন তিনিও গ্রেফতার হন।
ষাটের দশকে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তিনি ভাসানী ন্যাপের অনুসারী ছিলেন। উন-সত্তরের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের কারণে রাজশাহীতে তাঁর বিরুদ্ধে ৯ টি মামলা হয়েছিল। পাকিস্তানি আমলে পাক-সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশ ত্যাগ করে লন্ডনে ব্যারিস্টারী পড়তে যান। আমিনুল হক ১৯৭১সালে লিঙ্কন’স ইনের ছাত্র হিসাবে লন্ডনে অবস্থান করেছিলেন।
১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। আমিনুল হক ও সিলেটের আফরোজ আহমেদের সম্পাদনায় “রনাঙ্গন” নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধ কালীন প্রকাশ করতেন।
একটানা চারবার এমপি ও দুইবার মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর স্বপ্নের গোদাগাড়ী ও তানোরের অভুতপূর্ব উন্নতি করেন।
মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৮ হতে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ড কালীন প্রভাষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৪৪ বৎসর আইজীবী হিসাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দায়িত্বপালন করেছেন তিনি।
মরহুম,ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ধ্যান, জ্ঞান আর স্বপ্নে ছিল শুধুই মাতৃভূমি। স্বপ্নের সেই মাতৃভূমির সেবা করার সে সুযোগ মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দিয়েছিলেন। সব সময় তাঁর চিন্তাছিল মাতৃভুমির সেবার সর্বোচ্চ সদ্বব্যবহার।
এযুগের ছেলেমেয়েরা যারা জানেনা সেই সময়ের কাহিনী। কোন সে যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় গোদাগাড়ী ও তানোরের প্রাণ ভ্রোমরা গুঞ্জরিত হয়ে উঠলো। রুক্ষ্ণ মাটিতে প্রাণের স্পন্দন জাগলো যে প্রমত্ত পদ্মা মাইলের পর মাইল নিমেষে গ্রাস করতো সেখানে পাড় বাঁধানো পাথরের আর তাঁরের বাঁধন দিয়ে প্রমত্ত নদীকে বেধে রাখা হয়েছে।
মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হক বরেন্দ্রভূমি সহ অসংখ্যা রাস্তা-ঘাট সৃতি হিসেবে তৈরি করে গেছেন আজ বছরে তিনটা ফসল হচ্ছে মানুষ স্বছন্দে রাস্তা ব্যাবহার করছে। বাড়ীর পিছনের গোলাঘরে ফসল জমিয়ে কৃষককে দামের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। সুদীর্ঘ রাস্তা দিয়ে গাড়ী ছুটে চলেছে। ফল, সব্জি, ধানসহ সব রকম ফসল মাঠ থেকে পৌছে যাচ্ছে নিদৃষ্ট লক্ষে নতুন প্রজন্ম আজ বাড়ীতে বসেই পাচ্ছে সব শহরের সুবিধা। বড় বড় মার্কেট অর্ধেকরাত পর্যন্ত জমজমাট। সব সময় শহরের মতন মুখরিত গোদাগাড়ী ও তানোর।
একজন নিবেদিত প্রাণ জনসেবক তাঁর সংসার, সমাজ,আত্মীয় পরিজন সবত্যাগ করে জন মানুষের সেবার ভার গ্রহণ করেন। রাতের পর রাত দিনের পর দিন পথে ঘুরেন। অভিযোগ আসে, বাড়ীর পাশের রাস্তাটা হলো না কেন? কোন মা জলভরা চোখে বলেন কই-বাবা ভোট দিলাম, দুই ছেলের চাকরি হলো কিন্তু ছোটটার তো কিছুই হলো না। ওকি সারা জীবন বেকার থাকবে? বোঝানো যায় না, সীমাবদ্ধতার কথা আবার প্রশান্তিতের প্রাণটা ভরে উঠে যখন খবর পেয়ে দুর-দুরান্ত থেকে বৃদ্ধ যুবক মহিলা ছুটে আসে। বাড়ীর মুরব্বীরা দু-হাত তুলে দোয়া করে অশ্রুসিক্ত চোখে বুকে জড়িয়ে ধরে। ছোট্ট বালিকা নিজ হাতে বানানো মালা পরিয়ে দেয়। একজন বলে, মা কিন্তু আজকেও আপনার জন্য রোজা রেখেছে, কিছু খবর শুনলেই রোজার নিয়ত করে, হয়তো এটাকেই বলে পাওয়া। মাতৃভুমির জন্য মানুষের জন্য কাজ করার এখানেই সার্থকতা।
ব্যারিস্টার আমিনুল হক দেশকে মাতৃজ্ঞানে, মানুষকে ঐশ্বরিক মমতায়, মুগ্ধতায়, ভালোবেসে জীবনের পথে ছুটে চলেছেন। ভালোবাসতে জানা ও পারার মধ্যে যে অসম্ভব স্বর্গীয় আনন্দ আছে। পথে নেমে এসে, সব মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের এই সত্য উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন।
সব দরজায় তিনি কড়া নেড়েছেন, ভালোবাসার ডালা নিয়ে। কতটুকু দিতে পেরেছেন বা পারেননি কিন্তু চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের অগাধ ও অকৃত্রিম ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
মানুষের জন্য এই চেষ্টা টুকুই দেশকে ভালোবেসে তার টানে ছুটে চলা। এটাই মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হকের জীবনের মুল মন্ত্রছিল, তবে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি তিনি। এই বিশ্বাস নিয়েই মহান করুণাময় আল্লাহর কাছে ফিরে গেছেন। মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হকের শুদ্ধতা, ভালোটাও অপারগতা নিয়েই এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবেসেছিলেন। মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মূলমন্ত্র ছিল আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও জনগনকে ভালোবেসে তাঁদের স্বার্থ রক্ষা ও উদ্ধার। জনগনের প্রতিনিধি হিসাবে এলাকার মানুষ তাকে ভালোবেসে পাশে স্থান দিয়েছিলেন।
যে দিন মানবিক মূল্যবোধ ধর্মীয় উদারতা আর রাজনৈতিক মত পার্থক্যের উর্দ্ধে উঠে এই দেশকে এই দেশের মানুষকে নিজ স্বার্থের বাইরে এসে সবাই মিলে ভালোবাসতে পারবে সেদিন কেবল সম্ভব আইনের সঠিক প্রয়োগ, সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা ও সত্যিকার গনতন্ত্র, সঠিক অর্থে গনতন্ত্র আজ দুরাস্ত।
মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হক ২১ শে এপ্রিল ২০১৯ তারিখ গোদাগাড়ী – তানোর সহ বাংলাদেশের অসংখ্যা মানুষকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
প্রিয়জনদের চাওয়া মহান আল্লাহ মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হকের অন্তরের শুদ্ধতম প্রায়াসটুকু দিয়েই তাঁকে বিচার করবেন। মহান বিচারক মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহুর কাছে প্রিয়জনদের চাওয়া মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হককে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমীন