received 1078293716507707



স্টাফ রিপোর্টার-

অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী উপমহাদেশে, শিক্ষা, কৃষি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কিংবদন্তীর রাজনীতিবিদ শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক এর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয়ভাবে পালন করবার আহ্বান জানিয়েছেন শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক এর জন্মবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান বিশিষ্ঠ রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান।

আজ সকাল ১১ ঘটিকায় জন্ম উৎসব উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলার দৌহিত্র সাবেক সচিব ও বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান জন্ম উৎসব উদযাপন জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক প্রফেসর ডক্টর শহীদ মঞ্জু, সাংবাদিক সিরাজুল হক, সংগীতশিল্পী সানজিদা আক্তার, এইচ এম আরমান চৌধুরী, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক মজনু প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ বলেন ২০২৩ সালের ২৬ শে অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৬ শে অক্টোবর পর্যম্ত শের ই বাংলা বর্ষ ঘোষণা করছি।
সারা বছরব্যাপী দেশে বিদেশে সেমিনার, সেম্পুজিয়াম, আলোচনা সভায়ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন সহ স্মরণিকা প্রকাশনার মাধ্যমে শেরেবাংলার আদর্শ, চিন্তা,চেতনা ও দেশপ্রেমকে স্মরণীয় করে রাখা হবে।
সেইসাথে নতুন প্রজন্মের মাঝে কৃষক, শ্রমিক ও মানুষের জন্য শের ই বাংলার রাজনীতির দর্শন ও চেতনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।

গণমাধ্যমকর্মী সহ দেশবাসী এবং সারা বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষীকে উপমহাদেশের কিংবদন্তির নেতা শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকীকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করবার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় কমিটি ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক স্মৃতিপরিষদ আয়োজিত জন্মদিনের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৮ঃ৩০ ঘটিকায় জাতীয় নেতার মাজারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, মিলাদ, সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও মুনাজাত।

এছাড়াও বিকেল ৪ ঘটিকায় সেগুনবাগিচা কেন্দ্রীয় কচিকাচার মিলনায়তনে আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বরেণ্য ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও বরিশাল চাখার সহ ভারতের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্মদিন উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন ।
সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ আরো আশা প্রকাশ করে বলেন শেরেবাংলা বর্ষে সারা বছর জুড়ে, বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তার উপর আলোচনা সেমিনার, স্মরণিকা প্রকাশ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে তাঁর আদর্শকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিবেন।
তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে দোয়া করেন, মহান সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) রাজনীতিবিদ ও জননেতা। তিনি কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩) এবং পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫) এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদ (১৯৫৬-১৯৫৮)সহ বহু উঁচু রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। একজন বাঙালী রাজনীতিবিদ হিসেবে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কূটনীতিক ও রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বাংলার বাঘ এবং হক সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন।

আবুল কাশেম ফজলুল হক বাকেরগঞ্জ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ধিষ্ণু গ্রাম সাটুরিয়ায় ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পূর্বপুরুষদের বাড়ি ছিল বরিশাল শহর থেকে চৌদ্দ মাইল দূরে চাখার গ্রামে। তিনি ছিলেন মুহম্মদ ওয়াজিদ ও সায়িদুন্নিসা খাতুনের একমাত্র পুত্র।

১৮৯৭ সালে কলকাতার ‘ইউনিভার্সিটি ল কলেজ’ থেকে বি.এল ড়িগ্রি লাভ করে ফজলুল হক স্যার আশুতোষ মুখার্জীর অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। পিতার মৃত্যুর পর হক বরিশাল শহরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯০৩-১৯০৪ সময়কালে তিনি এ শহরের রাজচন্দ্র কলেজে খন্ডকালীন প্রভাষক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯০৬ সালে ড়েপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে হক সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯০৬ সালের ৩০ ড়িসেম্বর ঢাকায় সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতেও তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

স্যার খাজা সলিমুল্লাহ ও নওয়াব নওয়াব আলী চৌধুরীর কাছে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। তাঁদের সহযোগিতায় ১৯১৩ সালে তিনি তাঁর শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী রায় বাহাদুর কুমার মহেন্দ্রনাথ মিত্রকে পরাজিত করে ঢাকা বিভাগ থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মাঝখানে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে দুবছর সময়কাল (১৯৩৪-১৯৩৬) ছাড়া ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় আইন সভার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৩ সালে হক বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক হন এবং ১৯১৬ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন। সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক রূপেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯১৬ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত হক ছিলেন সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য রূপে তিনি সে সংগঠনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। হক ছিলেন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে ১৯১৬ সালে লক্ষ্মৌ চুক্তি প্রণয়নে সহায়কদের অন্যতম। ১৯১৭ সালে হক ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক এবং ১৯১৮-১৯১৯ সালে তিনি এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রূপে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৮ সালে ফজলুল হক সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের দিল্লি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯১৯ সালে ফজলুল হক জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের তদন্তের জন্য মতিলাল নেহরু, চিত্তরঞ্জন দাস ও অন্যান্য বিশিষ্ট নেতাদের নিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক গঠিত পাঞ্জাব তদন্ত কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯২০ সালে হক বাংলা প্রাদেশিক সম্মেলনের মেদিনীপুর অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *