img 20230926 133651

নিজস্  প্রতিবেদক লামা:

বান্দরবানের লামায় রেশম চাষিদের পলু পালন ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের ম্যানেজার ফেরদাউসুর রহমান ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর খিংওয়াইনু মার্মা মিমার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে তালিকাভুক্ত কয়েকজন রেশম চাষির বরাদ্দকৃত প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও বহিরাগত সহ নামে-বেনামি চাষিদের রেশম চাষ সম্প্রসারণে পলুঘর দেয়ার কথা বলে ঘুষ বাণিজ্য সহ নানান যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ।

জানা যায়, রেশম চাষ সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা সমূহের দারিদ্র্যবিমোচন শীর্ষক প্রকল্প ‘রাঙ্গামাটি’র বাস্তবায়নে সরকারি ভাবে বরাদ্ধ দেওয়া হয় ১৫০ জন পলু চাষীদের জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা করে পলু ঘর নির্মাণের জন্য মোট ৬ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ দেওয়া এই টাকায় উপকারভোগীদের পলু ঘর নির্মাণের কথা থাকলেও সরজমিনে উপকার ভোগীদের কাছে পলু ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এদিকে লামা রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের অস্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত মাঠ কর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় পলু পালন ঘর নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা বলে অফিস সহায়ক এর সমন্বয়ে জনপ্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাঠ কর্মী নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। জানা গেছে রেশম চাষী ছেনুয়ারা বেগম মাঠকর্মী নূরুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা ফায়দা না দেওয়ায় চাষী হয়ে ও কপালে জোটেনি বরাদ্দের প্রণোদনা। একই ভাবে মনোয়ারা বেগম নামে আরেক বৃদ্ধার নামের বরাদ্দের টাকা মাঠকর্মীর নুরুল ইসলামের নিকটাত্মীয় হুরে জান্নাতকে দিয়ে দেয়। এ বিষয়ে সরজমিন হুরে জান্নাত থেকে জানতে গেলে বলে অফিস সহায়ক সাংবাদিককে বেঁধে রাখার হুকুম দেন।

একইভাবে প্রকৃত উপকার ভোগীদের বাদ দিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বজনপ্রীতি করে এক পরিবারের ২/৩ জন সদস্যকেও প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করেছেন মাঠ কর্মী মোজাম্মেল হক। যাদের অনেকই রেশম চাষের সাথে সম্পৃক্ত নয়। ফলে বরাদ্দ অনুযায়ী ৪০ হাজার টাকা করে পেলেও সরজমিনে পলু ঘরের কোন অস্তিত্ব মিলেনি। সাথে জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার করে ফায়দা নেওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

সরজমিন গিয়ে উপকার ভোগীদের পলু ঘর তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান,পলু ঘর বাবত বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার টাকা পেতে মাঠকর্মীদের ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর বাকি টাকা দিয়ে কিভাবে পলু ঘর নির্মাণ করবো? তবে নিজেদের ঘরের অংশ বিশেষ মেরামত করে দেখালেও হবে বলে জানিয়েছেন অফিসের লোকজন। তারই প্রেক্ষিতে অনেকেই গোয়ালঘর এবং রান্নাঘরকে সাময়িক পলু ঘর হিসেবে দেখিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন আমরা রেশম চাষি না, পলু ঘর নির্মাণ করে কি করব!

পলুঘর নির্মাণ প্রকল্পের টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে সমন্বয় করে বিতরণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি কেউ অবগত নয় বলে জানা গেছে। তবে জনপ্রতিনিধির সাথে সমন্বয় করতে গেলে তারাও টাকার ভাগ চাই বলে জানিয়েছেন অফিস কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ম্যানেজার ফেরদাউসুর রহমান এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার ফাঁকে অফিস সহায়ক (মহিলা) ‘খিংওয়াইনু মার্মা মীমা’ ফোন কেড়ে নিয়ে অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম স্যার নয় আমিই দেখাশোনা করি, এখানে আমরা সবাই এক,কি বলবেন বলেন! অফিস বস আর মহিলা সহকারীর এমন রঙ্গরসের সমন্বয়তা ন্যাপথ্যে ভিন্নরূপ ইঙ্গিত দিলেও প্রশ্ন করা হয় প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে। পক্ষান্তরে অভিযোগ শিকার করে ম্যানেজার বলেন, কিছুটা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তবে সরকারি প্রকল্পের টাকা উপকারভোগীদরে দিয়ে না দিলে ফেরত চলে যাবে। তাই কোনমতে বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদক টাকা দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা করে এসব বিষয়ে আর কথা না বলতে অনুরোধ করেছেন তিনি।

এই বিষয়ে জানতে রাঙ্গামাটি রেশন উন্নয়ন বোর্ড আঞ্চলিক অফিসের পোর্টালে থাকা উপপরিচালকের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *