
শাহিন আলম, গোমস্তাপুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ গোমস্তাপুর উপজেলায় সমাজসেবা থেকে নিবন্ধিত মহানন্দা এনজিও গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে মহানন্দা এনজিওর এমডি অহেদুজ্জামান নিপু।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় সমাজসেবা থেকে নিবন্ধিত মহানন্দা এনজিও টি গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ীতে অবস্থিত। এনজিও টি গত দশ বছর ধরে বিভিন্ন কার্যকলাপ চালিয়ে গ্রাহকের লক্ষ লক্ষ টাকা এফডিআর হিসাবে জমা নেন, সেই এফডিআর এর টাকা চাইতে গেলে এনজিওর ব্যবস্থাপক তাদের টাকা না দিয়ে বিভিন্ন হুমকি ধমকি ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করছে।
কাঞ্চন তলা-২ আব্দুল মাজেদের ছেলে জামাল হোসেন বাড়ি বানানোর আশায় তিল তিল করে জমা রেখেছিলেন ৭ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ।সেই জমানো টাকা দিয়ে বা ঝর্না ওঋবে স্বপ্নের বাড়ি সে স্বপ্ন আর পূরন আর হলো না টাকা চাইতে গেলে দিনের পর দিন ক্ষেপন করেন এমনকি পড়তে হচ্ছে নানা হুমকির মুখে। সেই চিন্তায় যেন সার্বক্ষণিক তার সঙ্গী হয়ে গেছে।
আরেক ভুক্তভোগী বড়বঙ্গেশপুরের আবুল কাশেম
টাকা রেখেছিলেন ১৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৭২ টাকা। সেই টাকা দিয়ে ক্রয় করবে জমি সে জমি আর ক্রয় করা হলো না, টাকা চাইতে গেলে দিনের পর দি
ন পার করে এমনকি দিতে পারবো না বলে যা ইচ্ছা তাই করে নিস বলে। আইনের আশ্রয় নিতে গেলে আবার সে উল্টো মিথ্যা এনজিওর পরিচালক বানিয়ে মামলা করে হয়রানি করে। এ ভয়ে অন্য গ্রাহকরা তার উপর মামলা করতে ভয় পাচ্ছে ভুক্তভোগীরা।
আরেক ভুক্তভোগী দুর্গাপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে মাসরুদা আক্তার তিনি রেখেছিলেন দুই লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।তার বাচ্চাকে লেখাপড়া করাবে সে আশায়। কিন্তু এই এনজিও-র মালিক অহেদুজ্জামান নিপু দিনের পর দিন পার করছে টাকা ফেরত দিচ্ছে না এই নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর।
মানুয়ারা বেগম তার স্বামী একজন ভ্যানচালক ।সে ভ্যান চালিয়ে দুমুঠো খাবার জোগাড় করে কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় হিসেবে রেখে দেন মহানন্দা এনজিওতে। এখন সেই টাকার পরিমাণ ৭০ হাজার। সে টাকার জন্য তার বাসায় গেলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন এবং কি ভয়-ভীতি ও হুমকিও দেন, টাকা দিব না পারলে কিছু করে নিস। সেই কষ্টের দিন যাপন করছি আমার দুই মেয়ে আছে দুই মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দিতে হবে এই চিন্তায় আছি।
এদিকে ওই আলিম মাদ্রাসার একজন প্রভাষক তাসলিমা খাতুন বলেন, অহিদুজ্জামান নিপু ওই মাদ্রাসায় ঠিকমত আসেনা সে প্রোক্সি দিয়ে চালাই এবং কি মাদ্রাসার কোন শিক্ষককে সাথে ভালো আচরণ করেন না। বলতে গেলেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং কি বলেন তোর গলায় পা চাপাবো এ নিয়ে আমাদের সব শিক্ষকরাই আশঙ্কায় আছি।
নাম বলতে অনিচ্ছু অনেকেই বলে মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বানাইছে বাড়ি, ফ্ল্যাট আর এফডিআরের টাকা যে চাইতে আসছে তাকেই হুমকি, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে এর বিচার হওয়া দরকার।
এদিকে এনজিওর মালিক অহেদুজ্জামান নিপু স্থানীয় কাশিয়াবাড়ী আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। এনজিও পরিচালনার কারণে তিনি নিয়মিত মাদ্রাসায় আসতেন না এমনকি তাকে বলতে গেলে মাদ্রাসার সুপারের উপর চড়াও হয়।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও মহানন্দা এনজিওর মালিক অহেদুজ্জামান নিপুর সাথে কথা হলে , এফডিয়ার এর টাকা চাইতে আসলে তাকে হুমকি ও পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না আমার কাছে যারা টাকা পাবে তারা কেউ কেউ আদালতে মামলা করেছে সেটা আদালতের ব্যাপার এতে যদি আমি দোষী হই তাহলে আমি শাস্তি পাব আর আমি কারো উপরে মামলা করিনি যে দিয়েছে সেটা তার ব্যাপার।
মাদ্রাসার উপস্থিত থাকার কথা জিজ্ঞেস করিলে তিন্নি বলেন,আমি প্রতিদিন মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকি যেটা বলেছে সেটা মিথ্যা।
এ বিষয়ে কাশিয়াবাড়ি আলিম মাদ্রাসার সুপারের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান মাদ্রাসার নিয়ম হচ্ছে মাদ্রাসায় চাকরি করে বাইরে কেউ কোন এনজিও পরিচালনা করলে সেটা বহির্ভূত সেটা করতে পারবে না।
তিনি এনজিও পরিচালনার কারণে মাদ্রাসায় ঠিকমতো আসেননা ,তাকে বলতে গেলে সে আবার হুমকি-ধমকি দেন এমনকি এই মাদ্রাসায় জিএমবি বানানো হয় বলে হুমকি দেন। এ বিষয়ে তাকে সোকজ করা হয়েছে এবং কি ঊর্ধ্বতন অফিসার কে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বলেন তিনি একজন খারাপ মানুষ, মানুষের এফডিয়ার এর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এর একটা শাস্তি হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য পহেলা সেপ্টেম্বর মহানন্দা এনজিওর মালিক ও কাশিয়াবাড়ি আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক অহেদুজ্জামান নিপু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটুর বাড়ির সামনে এনজির টাকা পাবো বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলে একপর্যায়ে তার লোকজন তাকে মারধর করে।
আহত শিক্ষক অহিদুজ্জামান নিপুর ভাই আওরঙ্গজেব (৪৫) জানায়, নিপুকে মারার সময়ে ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। এক মেয়ে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করে । মারধর করে তারাই ভ্যানে করে বাড়ির সামনে তাকে ফেলে যায়।
এবিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটু বলেন, আমার পরিবার ও স্বজনদেরকে নিয়ে টাকা পাবো বলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করায় স্থানীয়রা তাকে মারধর করেছে। এমনকি অহিদুজ্জামান নিপু আমার কাছে কোন টাকা-পয়সা পাবে না।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, মারামারির ঘটনা থানায় একটি মামলা নেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।