জুয়েল আহমেদ :
রাজশাহী মহানগরীতে সমন্বিত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনিসেফ এর সহায়তায় সিটি ওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন (সিডব্লিউআইএস) প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজশাহী শহরব্যাপী অন্তর্ভূক্তিমূলক ও সমন্বিত স্যানিটেশন ও নিরাপদ পয়ঃবর্জ্যব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার দিনব্যাপী নগর ভবনের সিটি হলরুমে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।

রাসিকের সচিব মোঃ মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউনিসেফ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান নাজিবুল্লাহ হামীম, রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ইউনিসেফ ওয়াশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল আলম, আদনান ইবনে হাকিম এবংওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। নিরাপদ স্যানিটেশন বিষয়ে করণীয় বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বকুল।

প্রধান অতিথি সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরিতে সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ তুলে ধরে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সক্ষমতা তৈরী,এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন। মেয়র ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় রাজশাহী মহানগরীর স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণে ওয়ার্ড পর্যায়ে মতামত নিয়ে করণ ও স্যানিটেশন সংক্রান্ত বিদ্যমান সমস্যাচিহ্নিত করে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকা জোরদার করে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন।

সিটি মেয়র আরো বলেন, রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ ও নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত। নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখে চলেছে। ইপিআই কার্যক্রমে পরপর দশবার দেশসেরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। পরিবেশ উন্নয়নে দ্বিতীয়বারের মতো এ বছর জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেছি।

তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পয়:বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। ৮০ এর দশকে এ নগরীর পয়ঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই দূর্বল। বাড়ি বাড়ি থেকে দিনের বেলায় পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে তা ডাম্পিং পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হতো। পরবর্তীতে এ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। তবে নগরীতে এখন কিছু কিছু এলাকায় পয়ঃবর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে কিছুটা দূর্বলতা রয়েছে। এখনও অনেকে সরাসরি ড্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে যা সত্যিই কষ্টকর। এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ডাম্পিং ইয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্যাকুয়াম ট্যাংকার ক্রয় করা হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিসেফ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান নাজিবুল্লাহ হামীম রাজশাহী মহানগরীতে সমন্বিত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের মডেলে পরিণত করার আহবান জানান, এবং সেই সাথে নারী ও শিশুবান্ধব স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ইউনিসেফ সহায়তার আশ্বাস দেন। ইউনিসেফ এর সহায়তায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পয়ঃবর্জ্য সংরক্ষণনিশ্চিতকরণ এবং পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মানের উপযুক্ত স্থান বিবেচনা করে পুরো শহরের জন্য সমন্বিত স্যানিটেশন পরিকল্পনা প্রনয়ণ, পরিপূর্ণ সেবা ব্যবস্থা পর্যায় ক্রমিক বাস্তবায়নে গণসচেতনতা, প্রচারণা এবং স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক চাহিদা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিচ্ছে।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, নিরাপদ স্যানিটেশন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন, যা উপযুক্ত পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পানি পরিশোধন ব্যতীত অসম্ভব। সরু রাস্তা, ভ্যাকুয়াম ট্যাংকের অপর্যাপ্ততা এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ডাম্পিং এর কারণে পয়ঃবর্জ্য বা স্লাজ নির্ধারিত পরিশোধনাগারে পৌঁছায় না। অনুষ্ঠানে অপর্যাপ্ত পরিশোধন ব্যবস্থা, পরিশোধনাগারের জন্য জমির অপর্যাপ্ততা, পরিশোধিত স্লাজ পুনঃব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় গুনগত মান নিশ্চিতকরণএবংএকটি সম্পূর্ণ কার্যকর স্যানিটেশন ভ্যালু চেইন নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের অভাবের মতো পয়ঃবর্জ্য পরিশোধণ ও অপসারণ বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন ডলারএবং অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েট এর সাবেক অধ্যাপক ডঃ মুজিবুর রহমান। ইউনিসেফের রাজশাহীর প্রোগ্রাম অফিসার বেগম জেরিনা রেশমা, কমিউনিকেশন ফর ডেভেলপমেন্ট অফিসার মনজুর আহমেদ, ওয়াশ অফিসার রুহুল আমিন, প্রোগ্রাম এ্যাসিসটেন্ট ফারজানা ফেরদৌসী, সোনিয়া আফরিনসহ রাসিকের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা রাজশাহী মহানগরে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সক্ষমতা তৈরী, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা, স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, সঠিক ও নিরাপদ উপায়ে পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, পরিশোধন, পুনঃব্যবহার, অপসারণ এবং পয়ঃবর্জ্য হতে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং অর্থায়ন সহায়তা নিশ্চিতের ওপর আহবান জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *