জাবিবর খান :
রাজশাহীস্থ ভারতীয় ভিসা সেন্টারে ভিসা আবেদন জমা দিতে ও পাসপোর্ট ডেলিভারী নিতে চরম ভোগান্তিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির গুরতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও চলছে নগদ ডলার কেনা ছাড়াই ডলার এন্ডোর্সমেন্টের কপির রমরমা ব্যাবসা। এক হাজার টাকা হলেই হাতে মিলছে ডলার এন্ডোর্সমেন্টের কপি। যা এর আগে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে কিছুটা তুলে ধরা হয়েছিল। আবারও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে অবস্থিত সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ (এসআইবিএল), জনতা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের ডলার এন্ডোর্সমেন্টের কপি জমা হচ্ছে। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সঠিক থাকলেও দালালরা তাদের কপি বাইরে নিয়ে কম্পিউটার স্ক্যানের মাধ্যমে তার হুবুহু ডুপ্লিকেট ভুয়া কপি তৈরি করে ভিসা আবেদনের সাথে জমার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই দালাল চক্রকে মদদ ও সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে রাজশাহীস্থ ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (আইভ্যাক) ইনচার্জ সুমন দাস।

অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটীর সরাসরি মদদ ও প্রশয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে বর্তমান রাজশাহীস্থ ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (আইভ্যাক) ইনচার্জ সুমন দাস। তিনি নিজের পকেট ভারি করার লক্ষে দালালদের সকল অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন এমনটায় অভিযোগ দূরদূরান্ত থেকে ভিসা নিতে আসা সাধারণ মানুষের। এমন দুর্নীতির উৎকৃষ্ট উদাহরনের অন্যতম হচ্ছে পাসপোর্ট মালিক ছাড়াই মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট ভিসা বই দেওয়া।

ঘটনা-১ গত জুন মাসের ২ তারিখে ভিসার জন্য নিজের পাসপোর্ট বই জমা দেন, নওগাঁ মহাদেবপুর উপজেলার বিপ্লব কুমার সাহা। যার পাসপোর্ট নম্বরঃ BW0615404 এবং টোকেন নম্বরঃ ০২৭৮। এরপর ১৪ জুন ভিসা প্রসেসিং কমপ্লিট মর্মে মোবাইল ফোনে একটি ম্যাসেজ যায় বিপ্লব কুমারের কাছে। ম্যাসেজ অনুযায়ী ১৫ জুন বিপ্লব বইটি নিতে আসলে, বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ৭ দিনের সময় চেয়ে বিপ্লবকে ফিরিয়ে দেন রাজশাহীস্থ আইভ্যাক ইনচার্জ সুমন দাস। এমন করে ৬ টি সপ্তাহ চলে গেলেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি বিপ্লব কুমারের বই। এবিষয়ে বিপ্লব কুমারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি আজ দেড় মাস থেকে ঘুরছি। এখানে আসলেই অফিস থেকে ৭ দিনের সময় চান। আমি প্রতি সপ্তাহে আসি আর ৭ দিনের সময় হাতে নিয়ে চলে যেতে হয়। আমি কাজের মানুষ, আমার কি সময়ের দাম নাই? এখানে আসলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। কে দিবে এই খরচের ক্ষতিপুরন? আমাকে আবারও ২৪ জুলাই সময় দিয়েছে। এবার না পেলে আমি ভোক্তা অধিকারে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করবো।ঘটনা-২, গত ২১জুন ২০২২ তারিখে EF0781323 পাসপোর্ট বইটি জমা হয় এবং চলতি মাসের ৫ তারিখে ১৮৭ নং টোকেন জমা ছাড়াই ওই পাসপোর্ট বই বের করে দেন দালালের হাতে। অথচ এই বইয়ের মালিক “নিরা নাদিয়া” জানেন না তার বই কোথায়। এই সুমন দাস ও তার নেতৃত্ব ভিসা দালাল চক্র বেপরোয়া ভাবে এমন শত শত দুর্নীতি করে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। তিনি শুধু অনিয়ম দুর্নীতি করেই ক্ষান্ত নন, তার ইশারায় দ্বায়িত্বরত ষ্টাফরা ভিসা জমা দিতে ও নিতে আসা সাধরণ মানুষের সাথেও ক্রমাগত খারাপ আচরণ করেছেন বলে বহুদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। এমনি এক ভুক্তভোগী রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন। রুবেল গত ২৬ জুন ভিসা নিতে যান ভিসা সেন্টার রাজশাহীতে। সেদিন জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামরুজ্জামান হেনা’র জন্মদিনের প্রোগ্রাম থাকায় রুবেল টোকেনের আসল কপি বাসায় ছেড়ে আসেন। পরে রুবেল তার টোকেনের ছবি থেকে ফটোকপি করেন এবং সেটি দেখিয়ে ভিসা নিতে চান। রুবেল অনুরোধ করেন যে, আমাদের নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠান আছে একটু যদি দেওয়া যায়, এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগের সম্পাদকের পরিচয় দেন। কিন্তু আইভ্যাক ইনচার্জ সুমন দাস ও ষ্টাফ সিন্ডিকেটের খারাপ ব্যবহারের মুখে পড়ে যায় রুবেল। পরে নিজের সম্মান নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। অবশেষে গত ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার আসল টোকেন ও লাইনে দাড়ানোর মাধ্যমে নিজের পাসপোর্ট বইটি ফিরে পান। তবে বইয়ের ভিসা লাগানো ছিল। কিন্তু সেই ভিসাটি তার আর কাজে আসেনি। কারন সঠিক সময়ে ভিসাটি পাননি। রুবেলের মত এরকম শত শত রুবেলের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায় ভারতীয় ভিসা সেন্টারে। এমন ঘটনার জন্ম শুধু রাজশাহী নয়, এমন ঘটনা ও দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে রংপুর, ঠাকুরগাঁ ও বগুড়ায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা সেন্টার। প্রতিটি ভিসা সেন্টারে রয়েছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট গুলোকে মদদ দিচ্ছে রাজশাহীস্থ ভিসা সেন্টরের ইনচার্জ সুমন দাস, রাজশাহীর সাবেক ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটির আস্থাভাজন ভিসা এজেন্ট কুষ্টিয়া জেলার মানিক শর্মা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের হারাধন দাস।

অভিযোগ রয়েছে সুমন দাসের নেতৃত্ব পরিচালিত বর্তমান ভারতীয় ভিসা দালাল চক্রের প্রধান সহযোগী এই মানিক শর্মা ও হারাধন দাস। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম দুর্নীতি চোখে পড়েছে রাজশাহীস্থ ভিসা সেন্টারে। শুধু তাই নয়, অভিযোগে রয়েছে এসকল ভারতীয় ভিসার দালালরা রাজশাহীস্থ ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের স্টাফ ও ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন রাজশাহী অফিসের তৎকালীন বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটীর সরাসরি মদদ ও প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠা ভাটির ডানহাত বলে খ্যাত লোকাল ক্লার্ক পদে কর্মরত বিতর্কিত একজন স্টাফ এবং ভারতীয় কর্মকর্তাদের বাসায় বাসায় পৌছে দিচ্ছে নগদ টাকা, ফল, সবজীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস।

পরে এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (আইভ্যাক), বাংলাদেশ এর স্টেট ব্যাংকের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিসিও পদমর্যাদার কর্মকর্তা গৌরব চক্রবর্তী কে রাজশাহীস্থ ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সেখানকার অভিযোগের বিষয়ে আমাদের জানা নাই। সেখানকার কি কি তথ্য প্রমান আছে আমাদের দেন, আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব। পরে তিনি সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *