মকবুল তালুকদার

আসছে ২৩ সেপ্টেম্বর’২২ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেএী শেখ হাসিনা।ক্ষমতায় আসার পর ইতিপুর্বে মোট ১৮বার জাতিসংঘে সাধারন পরিষদে ভাষণ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এবার হবে ১৯তম। যতবারই তিনি(শেখ হাসিনা) জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন,ততবারই তিনি দায়িত্ববান সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার সহ বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র বিমোচন, পরিবেশ বিপর্যয়, মানব জাতির কল্যানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। পেয়েছেন বিশ্ববাসির আকুন্ঠ সমর্থন, ভূয়সী প্রসংশা ও সন্মাননা।অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী শোষন- নিপীড়ন ও আশ্রয়হীন শরণার্থীদের দু:খ-দুর্দশার তথ্য চিএ তুলে ধরে জাতিসংঘের সূক্ষ্ণ সমালোচনার মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে বলেছেন, এ জাতীয় ঘটনাকে অগ্রাহ্য করা বিশ্ব শান্তি, ন্যায্যতা ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।
প্রসংগত উল্লেখ্য, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মহান স্হপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিশ্বে চলমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ৭ মার্চ’৭১-এর মত গর্জে উঠে বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন”বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক; অন্যদিকে শোষিত এবং আমি শোষিতের পক্ষে”। ঐ ভাষনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সহ আফ্রো-এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র পিড়িত মানুষের কল্যানে প্রায় ২৫টি ইস্যু তুলে ধরেছিলেন; যা তৎকালীন বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও পররাষ্ট্রনীতিকে নাড়া দিয়েছিল। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থায় বাংলায় উচ্চারিত এ ভাষণটি আজও বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের প্রতিটি শব্দ শুধু ৭ কোটি বাঙালিই নয়, ৩০ লাখ শহীদও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন। দু:খ জনক যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের অধিবেশনে মাত্র একবার কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে জাতির পিতার কাল জয়ী উক্ত ভাষনের আবেদন কখনও শেষ হওয়ার নয় এবং গত ৪৮ বছরেও তা হয়নি।ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উক্ত ভাষনকে বিশ্ব ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। তাইতো, বিশ্ব সংস্হায় জাতির পিতার প্রস্তাবিত ভাষনের আলোকে এবং স্বাধীনত্তোর বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চলমান প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুকে মর্যাদাপূর্ণ ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত করেছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেএী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য ভূয়সী প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘ কর্তৃক জননেএী শেখ হাসিনাকে’ক্রাউন জুয়েল’ বা ‘মুকুট মণি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।এতদভিন্ন, জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০১৪ সালে ‘শান্তির বৃক্ষ’ এবং পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ প্রদান করে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর সবমিলিয়ে মোট ১৮বার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেএী শেখ হাসিনা। পিতার দেখানো সেই পথে হেঁটেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেএী শেখ হাসিনা।আজ থেকে ২৫ বছর আগে দেওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জাতির পিতার ভাষণে “উন্নত মম শীর”থেকে পথ হারানো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ফিরিয়ে এনেছেন তাঁর কন্যা জননেএী শেখ হাসিনা।পিতার কথাগুলোই বিশ্বকে নতুনভাবে, নতুন মোড়কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। জাতিসংঘের প্রতিটি অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানগর্ব ও তথ্য বহুল বক্তব্যের সঙ্গে গোটা বাঙালি জাতি এমনকি তৃতীয় বিশ্বের নেতারাও আপ্লুত হয়েছেন।বাঙালি জাতিও স্বস্তি পেয়েছেন এই ভেবে যে, বিশ্ব দরবারের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্মে বাংলাদেশ তার হারানো নেতার সুযোগ্য উত্তরসূরি ফিরে পেয়েছে। আর তৃতীয় বিশ্ব ফিরে পেয়েছে আরো একজন ‘হেভিওয়েট নেতা’। জাতিসংঘে এভাবেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা।আশা করছি এবারের জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি জননেএী শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সততায় ভরপুর অদম্য সাহস ও দৃঢতায় বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য বয়ে আনবে গৌরবোজ্জল এক অনন্য সন্মান। সমগ্র বাঙালি জাতি তাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ঐ দিনটির জন্য।
বর্নিত অবস্হায় জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে আগমনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেএী শেখ হাসিনাকে জানাই সুস্বাগতম।একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সর্বশেষ ঠিকানা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেএী শেখ হাসিনার দীর্ঘ জীবন ও সুসাস্হ কামনা করছি। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! বাংলাদেশ চিরদীবি হউক।
*যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি বীর মুক্তিযোদ্ধা, কলামিষ্ট, কৃষিবিদ ও উপদেষ্টা, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *