ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ এর ইতিহাস।
*ইমরান মামুন বরিশাল-
১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে সুদূর পারস্য থেকে আধ্যাত্মিক সাধক শাহ নেয়ামতউল্লাহ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন ঐ সময় মোগল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বঙ্গ দেশের সুবাহদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । শাহ নেয়ামতউল্লাহ কয়েক শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে বজরায় | চড়ে ইসলাম প্রচারে ও ইবাদত জন্য ভাটির মুলুকে প্রবেশ করেন। তিনি দিল্লী থেকে রওনা হয়ে গঙ্গা নদী অতীক্রম করে | বিষখালী নদীতে (তৎ কালীন চন্দ্রদ্বীপে) নোঙ্গর করেন । পরে শাহ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) শিষ্যদের নিয়ে বিবিচিনিতে আস্তানা গাড়েন । পরবর্তী মোগল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ সুজার অনুরোধে আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) বর্তমান বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নে মোঘ। স্থাপত্য শৈলী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দৃষ্টিনন্দন এক গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়া বিশিষ্ট এবং উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট । দক্ষিণ এবং উত্তর দিকে তিনটি দরজা রয়েছে। তবে মসজিদটিতে মূল প্রবেশদ্বার একটি । মসজিদের প্রবেশদ্বারের মূল ফটক সংস্কার করা হলেও প্রবেশপথ এখনো অপরিসর । মসজিদের ব্যবহৃত ইটগুলো মোঘল আমলের তৈরি। যার দৈর্ঘ ১২ ইঞ্চি, গ্রন্থ ১০ ইঞ্চি | এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। সমতল ভূমি থেকে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার উপর দিগন্তের মাঝে দাড়িয়ে আছে এ মসজিদ। শাহ্ নেয়মতউল্লাহ’র (রহঃ) কন্যা চিনিবিবির নামের সাথে মিল রেখে মসজিদের নাম দেওয়া হয় বিবিচিনি শা মসজিদ । শাহ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) এ মসজিদকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এ মসজিদ। এ মসজিদটি নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর স্থান হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। মসজিদ ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনার কাহিনী ও নানা ইতিহাস । তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। সুপেয় পানির অভাবে জনগণ কষ্ট পেত। শাহ নেয়ামতউল্লাহর (রহঃ) মানুষের এ কষ্টের কথা অনুভব করে তার সাধকতার আশ্চর্য তসবিহটি বিষখালী নদীতে ধুয়ে দিলে পানি হয়ে যায় সুপেয়। আজো সেই পা একই অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সে যুগে সুন্দরবন-সংলগ্ন বিষখালী নদীতে অসংখ্য কুমীর ছিল । তার অলৌকিক প্রচেষ্টা বিবিচিনি সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোন কুমীর আসতো না । এ কাহিনী এখনো এ এলাকায় প্রচলিত । এছাড়া কেউ কেউ মনে করেন এ মসজিদ জীন পরীদের দ্বারা হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) নির্মাণ করেছে। এ মসজি পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ বছর আগে যখন নির্মিত হয় তখন এখনকার মতো রাস্তাঘাট তো ছিলই না এমনকি নদীপথেও কোন জাহাজ চলাচল ছিলো না । ইটের ভাটা তো দূরের কথা । মসজিদ নির্মাণের জন্য অসখ্য ইট ব্যবহৃত হয়েছে। ধারণা করা হয় এ ইটগুলো হয়তো হযরত নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) জ্বীন দ্বারা আনিয়েছেন । এটি হয়তো আল্লাহর ওলী হিসেবে তাঁর কারামত । লোকমুখে এও প্রচলিত আছে যে এ মসজিদটি তৈরি করেছিল পরীরা। তাই কেউ কেউ এই সজিদকে পরীর মসজিদ বলেও জানেন । নেক মকসুদ পূর্ণতা লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এ মসজিদে ইবাদত বন্দেগী করতে আসেন ।
উপজেলা প্রশাসন বেতাগী, বরগুনা।