স্পোর্টস ডেস্কঃ

১৩৮ রান-কেমন লক্ষ্য? প্রশ্নটা সহজ, টি-টোয়েন্টির বিবেচনায় উত্তরটাও জানা-খুবই সহজ লক্ষ্য। কিন্তু মেলবোর্নের উইকেট ছিল দুই রকমের গতির আর প্রতিপক্ষ দলে আছেন শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো একজন বোলার। এ দুটি বিষয় মাথায় ছিল বলেই আজ মেলবোর্নের ফাইনালে আজ টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ১৩৭ করার পরও কেউ সহজে বলে দিতে পারছিলেন না, ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের পক্ষে!

ছোট পুঁজি নিয়ে পাকিস্তান ঠিকই লড়াই করেছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পেরে ওঠেনি। বেন স্টোকসের ৪৯ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংসে ৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুর ওভারেই ধাক্কা দেন আফ্রিদি। প্রথম ওভারের শেষ বলে তিনি তুলে নেন অ্যালেক্স হেলসের উইকেট। এরপর হারিস রউফ এসে ফিল সল্ট ও জস বাটলারকে তুলে নিলে বিপদেই পড়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তাদের রান ছিল ৩ উইকেটে ৪৯।

শুরুর এই ধাক্কা কাটিয়ে বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুকের ব্যাটে ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ১৩তম ওভারে শাদাব খানের বলে ব্রুক আউট হয়ে যাওয়ার পর একটু যেন গুটিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মনে হচ্ছিল পাকিস্তান ম্যাচে ফিরতে চলেছে।

১৫ ওভার পর্যন্ত ইংল্যান্ডের স্টোকস ও মঈন আলীকে হাত খুলতে দেননি পাকিস্তানের পেসাররা। ১৩ থেকে ১৫-এই তিন ওভারে ইংল্যান্ড শুধু একটা বাউন্ডারিই মারতে পারে। রান আর বলের হিসাবটা দাঁড়ায় এ রকম-জিততে হলে ৩০ বলে ৪১ রান! তবে ব্রুকের আউট যেমন পাকিস্তানকে সুবিধা এনে দেয়, তেমনি একটি অসুবিধায়ও ফেলে। ব্রুকের ক্যাচটি নিতে গিয়ে পায়ে চোট পান আফ্রিদি। খো্ঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছেড়ে যান পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার। তখনো তাঁর ২টি ওভার বাকি ছিল।

আফ্রিদি পরে ফিরে এলেও করতে পেরেছেন মাত্র একটি বল। ১৬তম ওভারের প্রথম বলটি করার পর আবার তিনি খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে যান মাঠের বাইরে। সেই ওভারটি শেষ করতে আসেন অফ স্পিনার ইফতিখার। তাঁর শেষ দুটি বলে একটি করে চার ও ছয় মেরে স্টোকস রান-বলের হিসাবের চাপটা দূর করেন। জয়ের হিসাবটা হয়ে যায় ২৪ বলে ২৮ রানের। এরপর আর ইংল্যান্ডকে বেঁধে রাখতে পারেনি পাকিস্তানের বোলাররা। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মঈনের উইকেটটি হারালেও শেষ বলে জয়ের আনন্দে ভাসে ইংলিশরা।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে খুব ভালো শুরু পায়নি পাকিস্তান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পারে ৩৯ রান। পঞ্চম ওভারে কারেনের বলে মোহাম্মদ রিজওয়ান বোল্ড হয়ে ফেরেন দলকে ২৯ রানে রেখে। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ১৫ রান করেছেন রিজওয়ান। এরপর অষ্টম ওভারে ফিরে যান মোহাম্মদ হারিসও।

এরপর শান মাসুদকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু খুব বেশি দূর দলকে নিয়ে যেতে পারেননি তাঁরা। ২৪ বলে তাঁদের ৩৯ রানের জুটি ভাঙে বাবরের আউটে। ২৮ বলে ৩৮ রান করে তিনি ফেরেন আদিল রশিদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। এরপর ইফতিখার আহমেদ ৬ বল খেলে কোনো রান না করেই ফেরেন। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩তম ওভারে ইফতিখার আউট হওয়ার সময় পাকিস্তানের রান ছিল ৮৫।

এরপর যেটুকু প্রতিরোধ গড়েছেন, তা সহ-অধিনায়ক শাদাব খানের ব্যাটেই। ২ চারে ১৪ ২০ রান করে ক্রিস জর্ডানের বলে ক্রিস ওকসের বলে ক্যাচ দিয়েছেন শাদাব। শেষের দিকে কেউ আর দুই অংক ছুঁতে না পারায় পাকিস্তানের রান দেড়শ ছোঁয়নি। ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার স্যাম কারেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনিই। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আদিল রশিদ ও ক্রিস জর্ডান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *