মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার, কিশোরগঞ্জ জেলা বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুলেনা (৪০) নামে এক গৃহবধূর শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলার আসামী আমান মিয়া (৪৫) কে গ্রেফতার করেছে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১আগস্ট) বিকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর ফকরুল হাসান ফারুক ফোর্স নিয়ে ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ও র্যাব-৩ এর সহায়তায় আসামী আমান মিয়াকে গ্রেফতার করে কুলিয়ারচর থানায় নিয়ে আসেন।
সাব-ইন্সপেক্টর ফকরুল হাসান ফারুক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে আসামী আমান মিয়া।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের নলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের সাহেব মিয়ার স্ত্রী অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ দুলেনার ছেলে রিমন মিয়ার উকিল শ্বশুর পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর (ভূইয়াবাড়ী) গ্রামের মৃত কাঞ্চন মিয়ার ছেলে আমান মিয়া (৪৫) ব্যাগের ব্যবসার নাম করে তাদের নিকট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কর্জ (ধার) নেয়। পরে কয়েক ধাপে তাদের পাওনা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা ফেরত দেয় অভিযুক্ত আমান মিয়া। বাকি ২৬ হাজার টাকা দেয় দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। বাকি টাকা ফেরত না দেওয়ায় ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিচার দাবি করলে অভিযুক্ত আমান মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওই গৃহবধূ ও তার স্বামীকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে আসছিলো। এরই জের ধরে গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই গৃহবধূ মানত আদায় করে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর হযরত মাওলানা আবু আলী আক্তার উদ্দিন শাহ্ সাহেবের মাজার শরীফ থেকে বাড়ী ফেরার পথে ফরিদপুর গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার বাড়ির পিছনে মুরগীর ফার্ম সংলগ্ন আসা মাত্র আগে থেকে উৎ পেতে থাকা আমান মিয়া ওই গৃহবধূকে খুন করার উদ্দেশ্যে গৃহবধূর গলায় জাপটে ধরে মাথায় ও শরীরে এক বোতল দাহ্য পদার্থ ঢেলে ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় গৃহবধূর সাথে থাকা হেনা বেগম ওরুফে মস্তি নামে এক মহিলার ডাক চিৎকারে পার্শ্ববর্তী বাড়ির চৌকিদার আল আমিনের স্ত্রী আছমা (৩৫) ও ইকবালের স্ত্রী খাদিজা (৩৫) এগিয়ে এসে তাৎক্ষণিক আল আমিনের বাড়ির টিউবওয়েলে নিয়ে পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও গৃহবধূর শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
স্থানীয়রা জানান, আমান মিয়া চোখের পলকে দুলেনার শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে সলা ম্যাচের কাটি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় দুলেনা শরীরে আগুন লাগা অবস্থায় এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে চিৎকার করতে থাকেন। পরে প্রথমে আছমা টিউবওয়েলে নিয়ে শরীরে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে বহু লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, গৃহবধূর শরীরে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ২২ জুলাই কুলিয়ারচর থানায় ৪(২)(থ)২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ সালের দহনকারী পদার্থ দ্বারা আগুন লাগাইয়া আহত করার অপরাধে একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলা নং- ১৫। বহু চেষ্টার পর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত আমান মিয়াকে ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ।