মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার, কিশোরগঞ্জ জেলা বিশেষ প্রতিনিধিঃ

আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও গ্রামের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার
গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শুরু হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় হাডুডু টুর্নামেন্ট-২০২২।

গত ২৫ জুলাই সোমবার বিকালে ওই খেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ১নং গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন যুব সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় হাডুডু টুর্নামেন্ট-২০২২ এর প্রথম রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচে মাঠের চারদিকে ছিলো হাজার হাজার মানুষের সমাগম, আর মাঝখানে নিজেদের শারীরিক করসত দেখাচ্ছেন খেলোয়াররা। মুহুমুহু তালিতে দর্শকরা উৎসাহ দিচ্ছেন খেলোয়ারদের। গ্রাম বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় জাতীয় খেলা হাডুডুর যে কদর কমে যাননি উপজেলার পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মানুষের সেই ঢলই তা প্রমান দিয়েছে। দর্শনার্থীরা মেঘলাদিনে দেখতে এসেছিলেন এ হাডুডু খেলা।

জনপ্রিয় এ হাডুডু টুর্নামেন্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে শুভ উদ্বোধন করেন গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো. সাইফুল ইসলাম শরীফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য মো. রমিজ উদ্দিন ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো. আফজাল হোসেন (অভি)। ওই দিন খেলায় অংশগ্রহণ করেন লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়ার ইব্রাহীমে দল বনাম পূর্ব আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার দল। খেলায় ০৪-০৭ পয়েন্টে লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া দলকে হারিয়ে বিজয়ী হয় পূর্ব আব্দুল্লাহপুর দল। খেলা পরিচালনার দ্বায়িত্ব পালন করেন সাবেক ইউপি সদস্য মো.মাসুদ রানা। খেলার ধারা বর্ণনায় ছিলেন, আবু সালেহ ও মো. আব্দুল্লাহ-আল উসমান গনি।

জাতীয় এই খেলাকে ঘিরে তৈরি হয় উৎসব মুখর পরিবেশ। যুবক ও শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের লোক সম্মিলিত ভাবে এই খেলা উপভোগ করেন।

খেলার আয়োজকরা বলেন, এক সময় এ দেশে গ্রামীণ খেলাকে প্রধান খেলা হিসেবে জানতো। কিন্তু তার জায়গা দখল করে নিয়েছে লুডো, কেরাম, ক্রিকেট, টিভি, মোবাইল ও কম্পিউটার। আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অবশ্যই গ্রামীণ ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা দরকার। এতে আগামী প্রজন্ম আমাদের এসব খেলাকে জানতে পারবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা। যা শত বছরের নিজস্ব ক্রীড়ার ঐতিহ্য। তারা আরো বলেন, গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্য কাবাডি (হাডুডু) খেলা আমাদের দেশের জাতীয় খেলা হলেও এখন অনেকটাই কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। এমন আয়োজন সচরাচর দেখা যায় না। এ খেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরের ন্যায় আমাদের গ্রামে এবছরও হয়েছে আগামীতেও কাবাডি বা হাডুডু খেলা আয়োজন করা হবে।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ বলেন, দেশের জাতীয় খেলাকে টিকিয়ে রাখতে ও যুব সমাজকে মাদক মুক্ত রাখতে খেলায় আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের সাথে সৌহাদর্য বাড়াতে প্রতি বছরই এধরনের খেলার আয়োজন করা দরকার। এ ধরনের আয়োজন করলে প্রতিভাবান খেলোয়ার তৈরী হবে এবং আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে পারবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তারা।

খেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক এলাকার বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক মো. সাইফুল ইসলাম শরীফ জানান, ঐতিহ্যবাহী এই খেলাকে ধরে রাখতে ও বর্তমান প্রজন্মের কাছে হাডুডু খেলাকে পরিচিত করার পাশাপাশি ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এমন আয়োজন। গত ২২ জুলাই শুক্রবার থেকে এ টুর্নামেন্ট শুরু হয়। টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে খেলায় অংশগ্রহণ করে দশকাহুনিয়া বনাম লক্ষ্মীপুর মাতুয়ারকান্দা দল। দ্বিতীয় ম্যাচে অংশ করে লক্ষ্মীপুর নামাকান্দা বনাম পূর্ব গোবরিয়া দল। তৃতীয় দিনে অংশগ্রহণ করে লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া বনাম পূর্ব আব্দুল্লাহপুর দল। মঙ্গল বার চতুর্থ ম্যাচে অংশগ্রহণ করবে বড়চারা বনাম পশ্চিম গোবরিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *