মোঃ ইমরান হোসাইন স্টাফ রিপোর্টার।।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে ভাস্কর্য বানাতে শুরু করেছিলেন দিনমজুর সাহেব আলী।

৭১-এর বর্বরোচিত ও স্বাধীন বাংলার ঐতিহাসিক নানা দৃশ্যপট নিয়ে ৬৬টি ভাস্কর্য বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে ভাস্কর্য বানাতে গিয়ে তার বসত-ভিটে বেচে দিতে হয়েছে। অবশিষ্ট ৫টি ভাস্কর্য নির্মাণের আগে ভয়াবহ ক্যান্সার তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে তার মৃত্যু হয়েছে। সাহেব আলীর ছেলে হাসান খান এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুর আগে সাহেব আলীর খাদ্যনালিতে টিউমার সৃষ্টি হয়; পরে তা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও আর্থিক সংকটে উন্নত চিকিৎসা দিতে সক্ষম হয়নি পরিবার। পটুয়াখালী জেলা সদরের আউলিয়াপুরের অজোপাড়া গায়ের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ছিলেন নিরক্ষর সাহেব আলী।

নব্বইয়ের দশকে মুন্সীগঞ্জের একটি চালের মিলে কর্মরত অবস্থায় এক বীরাঙ্গনা সহকর্মী রাহিমার মুখে ৭১-এর বর্ণনা শোনেন সাহেব আলী। এতে ভাস্কর্য বানাতে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে বাড়ি এসে ভাস্কর্য বানানোর নীরব সংগ্রামে নামেন নিরক্ষর এই দিনমজুর। ভিন্ন এই শিল্পায়নের রূপ দিতে বসত-ভিটে বিক্রি করেছেন তিনি। অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার নিয়ে ভাঙা ঘরেও থেকেছেন। ধার-দেনার জর্জরিত হলেও বন্ধ করেনি ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ।

নিরক্ষর হাতে সিমেন্ট-বালুর মিশ্রণে মুক্তিযুদ্ধের বর্বরোচিত ৬৬টি স্থিরচিত্র তুলে ধরেছিলেন নিজ বাড়ির আঙিনায়; যা দেখতে উপচেপড়া ভিড় জমাতেন মানুষগুলো। বাকি ৫টি ভাস্কর্য নির্মাণ শেষ না করতেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সাহেব আলী নির্মিত ভাস্কর্যে রয়েছে- শেখ মুজিবের বজ্রমুষ্টি এবং তার জ্যেষ্ঠ আঙ্গুলে স্থাপন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাকে, বীর যোদ্ধার পদদলিত (পাক বাহিনী) কাল নাগ, ১৫ আগস্টের ভয়াবহ বুলেট, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ৫২-এর ভাষা আন্দলোনসহ মোট ৬৬টি ভাস্কর্য। নিজ আঙিনায় ফুটিয়ে তুলছেন স্বাধীনতার রক্তস্নাত স্মৃতিগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *