স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর কদমতলী , যাত্রাবাড়ি ও শ্যামপুর থানা এলাকার কুখ্যাত চাদাঁবাজ-সন্ত্রাসী, জুয়ারু , মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী টোকাই হাবিবকে জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৬০নং ওয়ার্ডের আহবায়ক ও সাধারণ সদস্য পদ হতে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় শ্রমিক লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের নিকট এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান টোকাই হাবিব ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক লীগের এক বিষফোড়া । টোকাই হাবিবের নামে দেশের একাধিক থানায় মাদক, মানব পাচার,জুয়া, চাঁদাবাজি ও অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে মামলা ও অসংখ্য জিডি থাকার ফলে জাতীয় শ্রমিক লীগের সুনাম নষ্ট ও সাংগঠনিক শৃংখলা ভঙ্গ হয়েছে, তাই তাকে গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং তারিখে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ।

কদমতলী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায় গত ২৫ আগস্ট সকালে ডিএমপি’র কদমতলী থানা এলাকার পলাশপুর গ্যাসরোডে আত্মগোপনে থাকা টোকাই হাবিবকে থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম যাত্রাবাড়ি থানার ১২ (৫) ১৭ নং (মানব পাচার) মামলার ওয়ারেন্টমূলে গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করে। কিন্তু গত ১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে মরিয়া হয়ে ওঠে । এর আগে ২০ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে কদমতলী থানার মামলা নং ৬২(৫)১৮, ধারা: মাদকদ্রব্য নি: আ: ১৯ (১) এর ৭(ক)/২৫ মূলে গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে টোকাই হাবিব গা ঢাকা দেয়। যাত্রাবাড়ি থানার নন এফআইআর নং ৫১৪/২০২১ সূত্রে জানা যায় বিগত ১২ নভেম্বর ২০২১ ইং তরিখে জুয়া খেলা অবস্থায় জুয়ার বোর্ড থেকে র‌্যাব -১০ টোকাই হাবিবকে কয়েকজন সহযোগী সহ গ্রেপ্তার করে। জামিনে এসে টোকাই হাবিব পুনরায় পূর্বের চেয়ে আরো দাপটের সাথে সমস্ত অপকর্ম চালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। এছাড়াও টোকাই হাবিবের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে । শুধু কদমতলী থানায় টোকাই হাবিবের নামে মারধর ও চাঁদার দাবীতে জীবন নাশের হুমকীর অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি যে সব জিডি করেছেন তম¥ধ্যে জিডি নং ১৩৮৩ তাং২১/১১/২০২১ অভিযোগকারী সহিদুল(হান্ডি), জিডি নং ৫৯তাং ৩১/১০ ২০২১ অভিযোগকারী মো: কামাল, জিডি নং ১৮৩ তাং ০৩/১০/২০২১ অভিযোগকারী রুবেল সিকদার,জিডি নং ৫০ তাং ০১/১০/২১ অভিযোগকারী শহিদুল ইসলাম,জিডি নং ৪৮ তাং০১/১০/ ২০২১ অভিযোগকারী মো: হান্নান অন্যতম। এছাড়াও টোকাই হাবিবের পিসিপিআর পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে আরো অসংখ্য মামলা ও জিডি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কে এই টোকাই হাবিব : জানা যায় টোকাই হাবিবের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলাধীন দক্ষিণ ক্রোপচরে। টোকাই হাবেিবর পুরো নাম মো: হাবব সরদার (হাবিব), পিতার নাম আব্দুল মান্নান সরদার । ছোট বেলা থেকেই হাবিব এলাকায় চুরি ডাকাতির সাথে জড়িয়ে পড়ে । নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এলাকাবাসি হাবিবের অপরাধমূলক কর্তকান্ডে অতিষ্ট হয়ে গণধোলাই দিয়ে এলাকা ছাড়া করলে হাবিব ঢাকায় এসে প্রথমে রাস্তায় কাগজসহ নানাবিদ রিজেক্ট দ্রব্যাদি কুঁড়িয়ে তা ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো বলে লোকে তাকে টোকাই হাবিব বলে ডাকতো। একসময় ”টোকাই” উপাধি গোচাতে সে ঝাঁলমুড়ি বিক্রি শুরু করে। এক পর্যায়ে টোকাই হাবিব মাদকাসক্ত হয়ে চুরি, ডাকাতি,ছিনতাই সহ নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। পরবর্তীতে মাদক সেবনকারী থেকে হাবিব মাদক ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে, আর মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের জন্য কদমতলী, শ্যামপুর ও যাত্রাবাড়ি এলাকায় একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। টোকাই হাবিবের বাহিনীর অন্যতম সদস্য হলো পলাশ,আনসার, আলম, শামিম ( সিএনজি গ্যারেজ মালিক), জাহিদ চৌধুরী,খোকন, বাদল,মানিক ও জনি । টোকাই হাবিবের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে নারীদেহ ব্যবসার পাশাপাশি খদ্দেরকে বাসায় আটকিয়ে উলঙ্গ ছবি তুলে ব্লাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে হাবিব অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছে। এরপর শ্রমিক লীগের স্থানীয় এক নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে শ্রমিক লীগের অন্যান্য নেতা কর্মীর সাথে পরিচিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় এক সময়ে হাবিব ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬০ নং ওর্য়াড শ্রমিক লীগের আহবায়কের পদ লাভ করে। এই পদ পাওয়ার পর হাবিব আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে শ্রমিক লীগের সামান্য একটি ওয়ার্ড আহবায়কের পদ যেন হাবিবের নিকট চাঁদাবাজি, জুয়ার বোর্ড বসানো,মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। কয়েকদিন পূর্বে টোকাই হাবিব ও জাহিদ বাহীনি মিলে দনিয়ায় বর্নমালা স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুস ছালাম বাবুর অপসারণের দাবীতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসি গণধোলাই দিলে অবস্থা বেগতিক দেখে টোকাই হাবিব ও জাহিদ বাহীনি পালিয়ে যায় ।

টোকাই হাবিবের খুঁটির জোর কোথায় : সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, টোকাই হাবিবের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা হলেন সিএনজি গ্যারেজ মালিক শামিম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৬০নংওয়ার্ডের অর্ন্তগত নুরপুরের জাহিদ চৌধুরী। এই জাহিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও এলাকার রাস্তা প্রসস্থ ও রিপিয়ার করার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তারের লক্ষে জাহিদ চৌধুরী টোকাই হাবিব বাহিনীকে ব্যবহার করে আগামী কাউন্সিলে ৬০নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছে বলে জানা গেছে বলে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় টোকাই হাবিব ২৪ ফুট ৯নং রোডে মসজিদের পাশে শামিমের সিএনজি গ্যারেজে ও ৬০নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত দনিয়ায় নুরপুরের জাহিদ চৌধুরীর বাসায় রাতে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপসহ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। টোকাই হাবিবের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এলাকাবাসি মুখ খুলতে চায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা কিছু বলে লাভ নাই, কেননা কিছুদিন পর পর টোকাই হাবিব গ্রেপ্তার হয় আবার জামিনে এসে আগের মতোই অপকর্ম করে যাচ্ছে । টোকাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *