তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভার চিনাশো সিনিয়র আলিম মাদরাসায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী মাদরাসার বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে গত ১৭মে মঙ্গলবার ডাকযোগে স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা জানান, মাদরাসায় নিয়মিত পাঠদান হয় না।এছাড়াও মাদরাসার অস্থিত্ব ধরে রাখতে অনেক ভুয়া ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হয়েছে। এমনকি আলিম বিভাগে ছাত্রছাত্রী ভর্তি দেখানো হলেও তেমন কোনো ক্লাস নেয়া হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) রাজিয়া খাতুনের নিবন্ধন সনদ জাল (ভুয়া)। অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে তিনি ভুয়া সনদে চাকরি করছেন। তারা বলেন, অধ্যক্ষকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দিয়ে রাজিয়া খাতুন চাকরি নিয়েছেন, যেকারণে অধ্যক্ষ বিষয়টি জানার পরেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি গোপণ রেখেছেন। ওই শিক্ষকের এমপিও না করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্ত্ত অধ্যক্ষ জালিয়াতি করে তার এমপিওভুক্তকরণ করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে। অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে এখানে এমন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে যারা ইংরেজী রিডিং পড়তে পারে না এমনকি শিক্ষকতার কোনো যোগ্যতা তাদের নাই। সরেজমিন অনুসন্ধান করলেই এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৬৯ সালে উপজেলার পাঁন্দর ইউনিয়নের (ইউপি)(তৎকালীন) চিনাশো গ্রামে চিনাশো এবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে দাখিল ও ১৯৭৭ সালে আলিম বিভাগের স্বীকৃতি অর্জন করে।মাদরাসার প্রায় ৭ একর ফসলী সম্পত্তি রয়েছে। অথচ মাদরাসার সীমানা প্রাচীর নাই, মানসম্মত একাডেমিক ভবন নাই, নাই কমন রুম, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব নাই লাইব্রেরীও। মাদরাসায় আলিম বিভাগে শিক্ষক রয়েছে ৬ জন, দাখিল বিভাগে ১৯ জন ও কর্মচারী রয়েছে ৬ জন। সৃজনশীল বোঝে এবং প্রশ্ন করতে পারে এমন শিক্ষক এখানে নাই। সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা পরীক্ষার প্রশ্ন নিজেরা প্রণয়ন করতে পারেন না। শিক্ষক সমিতি বা বিভিন্ন পেশাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা নেয়া হয়। আবার অনেক সময় গাইড বই দেখে প্রশ্ন তৈরি করা হয়। অথচ গাইড ও নোটবইয়ের দাপট কমাতে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। একাধিক অভিভাবক বলেন, মাদরাসার বিশাল সম্পত্তির আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব অধ্যক্ষ দেন না। এছাড়াও শিক্ষক-কর্মচারীগণ সবাই সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় রয়েছে।
স্থানীয় অভিভাবকগণ সরেজমিন তদন্ত করে মাদরাসার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হারুন অর রশিদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি কুচক্র মহল মাদরাসা ধ্বংসের নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এবিষয়ে সহকারী অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আফসার আলী বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে ছোট-খাটো ক্রটিবিচ্যুতি থাকবে এটা স্বাভাবিক। এবিষয়ে মাদরাসার সভাপতি ও কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন মন্টু বলেন, আগে কি হয়েছে বলতে পারবেন না,তবে তার সময়ে কোনো অনিযম বা দুর্নীতি হয়নি। এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তিনি এখানো কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি, তবে এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। তিনি আরো বলেন, ভুয়া শিক্ষকতা করার অভিযোগ প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে সহকারি শিক্ষক রাজিয়া খাতুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা মাদরাসা কমিটি দেখবেন সাংবাদিকের কাজ এটা না।