এম শাহজাহান মিয়া শেরপুর প্রতিনিধিঃ
১৯৭১ সালের এই দিনে নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার-আলবদররা ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করেছিল। সেই থেকে সোহাগপুর গ্রামের নাম হয় বিধবা পল্লী। জানাযায়, ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ওই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছে-এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় ১৫০ জনের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী স্থানীয় প্রফুল্লের দিঘি থেকে সাধুর আশ্রম পর্যন্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের আশ্রয়দাতাদের। ওই সময় প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সামনের দিকে এগিয়ে যান স্থানীয় কৃষক আলী হোসেন ও জমির আলী। কিন্তু তারা বেশীদূর যে‌তে পারেননি। এক রাজাকার গুলি করে দু’জনকেই হত্যা করে। এরপর শুরু হয় নারকীয় তান্ডব। মাঠে কর্মরত রমেন রিছিল, চটপাথাং ও সিরিল গাব্রিয়েল নামে ৩ গারো আদিবাসীকে হত্যা করে। একে একে হত্যা করা হয় আনসার আলী, লতিফ মিয়া, ছফর উদ্দিন, শহর আলী, হযরত আলী, রিয়াজ আহমেদসহ প্রায় ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ মানুষকে। একইসাথে হায়েনাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন ১৩ জন নারী। সেদিন কলাপাতা, ছেড়া শাড়ী আর মশারী দিয়ে কাফন পড়িয়ে ৪/৫ টি করে লাশ এক একটি কবরে দাফন করা হয়েছিল। আবার কোন কোন কবরে ৭/৮টি করে লাশও এক সাথে কবর দেওয়া হয়েছিল। ওই নারকীয় হত্যাকান্ডের জীবন্ত স্বাক্ষী রয়েছেন অনেকেই। সেদিন সোহাগপুর গ্রামের সকল পুরুষ মানুষকে হত্যা করায় পরবর্তীতে ওই গ্রামের নাম হয় ‘বিধবা পল্লী’। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হলে বেগম মতিয়া চৌধুরী সহায়তার হাত বাড়ান সোহাগপুর বিধবাপল্লীর প্রতি। ধাপে ধাপে তারই প্রচেষ্টায় বিধবাদের প্রত্যেকে ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ২ হাজার টাকা, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে ৪শ ও সরকার থেকে ৪শ টাকা হারে বয়স্ক ভাতাসহ মোট ২ হাজার ৮শ টাকা পাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে ২৯ বিধবাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি করে পাকা বাড়ি উপহার দিয়েছেন। ১৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিধবাপল্লীতে পাকা সড়ক হয়েছে। কাঁকরকান্দির বুরয়াজানি গ্রামে শহীদদের স্মরণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় করে দিয়েছেন মতিয়া চৌধুরী। সেই বিধবাদের মূল্যায়নের পাশাপাশি তাদের পরিবার-পরিজনের দিন-মান পরিবর্তনে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।এছাড়া দীর্ঘ ৫০ বছর পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য জেলা পুলিশ বিভাগের সদস্যরা তাদের বেতনের টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে দিয়েছেন। সেখানে নির্মিত হয়েছে সৌরজায়া নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ ও স্মরণসভার মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *