এসএম রুবেল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

স্বামী পরিত্যাক্তা আকলিমা খাতুন ছাত্রবাসে রান্না করে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। নিজের জায়গা-জমি না থাকায় আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার ধারের সরকারি জায়গায়। টাকার অভাবে ঠিকমতো বাসযোগ্য করতেও পারেননি, যেখানে বসবাস করেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এক টুকরা জমি ও ঘর পেতে ঘুরেছেন জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তাতেও কোন লাভ হয়নি।

নাজমা বেগম কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। তারও নেই নিজের জায়গা জমি, ঘর-বাড়ী। কাজকর্মে অক্ষম স্বামীর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সংসার পরিচালনা করছেন অনিতা রানি। একই অবস্থা তানু খাতুন ও সদ্য মুসলিম হওয়া খাতিজা খাতুনের। তারা সবাই পেটের দায়ে ও সংসার চালাতেই বিভিন্ন কাজে লিপ্ত রয়েছে। তারা সবাই ভূমিহীন-গৃহহীন।

এমন অর্ধশতাধিক ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। মঙ্গলবার (০৬ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সদর উপজেলার বারোঘরিয়া নতুন বাজারের ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের ব্যানারে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,আমরা প্রায় ৫৫টি পরিবার ভূমিহীন-গৃহহীন। যার কারনে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার পাশের খাস জায়গায় বসবাস করছি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে বলেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছি না। উল্টো যারা সমাজের বিত্তবান, সামর্থ্যবান তাদেরকে ঘর দেয়া হয়েছে। যেসব ঘরে কেউ বসবাস করেনা। তাই প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দাবি জানায়।

গৃহবধূ অনিতা রানি বলেন, আমরা প্রশাসনকে বারবার বিষয়টি জানিয়েও ঘর পায়নি। অথচ আমাদের এলাকায় একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪১টি ঘর রয়েছে৷ যেখানে বসবাস করে ৫টি ঘরে। বাকিগুলো ফাঁকায় পড়ে রয়েছে। ঘরগুলো তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা জনগোষ্ঠীর মাঝে দেয়া হয়েছে। অথচ তারা প্রত্যেকেই সামর্থ্যবান। আমাদের দাবি, তারা ঘর পাওয়ার উপযুক্ত না হয়েও যদি ঘর পায়,তাহলে আমরা ভূমিহীন-গৃহহীন হয়েও কেন ঘর পাব না?

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,তানু খাতুন, আকলিমা খাতুন,খাতিজা খাতুন,অনিতা রানি,নাজমা বেগমসহ অন্যান্যরা। পরে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিতভাবে তাদের দাবি জানান। এসময় জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনদেরকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদানের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন।

উল্লেখ্য,আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন ৪ হাজার ৮১৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। চলতি বছরের ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ সদর, নাচোল,গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *