জুয়েল আহমেদ :
নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু কিছু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। শৌখিন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও কর্মস্থলে সবুজকে ধরে রাখার জন্য নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় পরিত্যক্ত বা ছাদেই গড়ে তুলেছেন এক টুকরো সবুজ উদ্যান।

এমনই এক সবুজপ্রেমী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যম ক্ষুদ্র সেচ ব্যবহার (এসডব্লিউআইপি) প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শরীফুল হক।

অফিসের ছাদে গড়েছেন শাক-সবজি, ফুল-ফলের বাগান। এতে বাহারি গাছের সঙ্গে আছে ওষুধি গাছ। আছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের গাছ। শহুরে জীবনে সবুজের সজীবতার মধ্যে বেঁচে থাকতেই তার এই প্রয়াস। ছাদের চারপাশ তৈরি করেছেন মাটি ভর্তি বিভিন্ন রঙ-বেরঙের টব।

সেখানে রয়েছে ড্রাগন, মাল্টা, আম, কমলা,তরমুজ, লেবু, মরিচ, বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা, আঙুর, বেল, আমড়া, করমচা, আপেল, বেগুন, মরিচ, কামিনী, মধুমালতি, মাধবীলতা, বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস থাইসহ ফলজ, বনজ, ভেষজ বা ওষধি, শোভাবর্ধনকারী এবং দেশিয় প্রায় ৫০ প্রজাতির গাছ।

ভালোবাসার ছোঁয়ায় গাছগুলোকে নিজের সন্তানের মতো গড়ে তুলেছেন। কোন গাছের কি প্রয়োজন তা ভালোভাবেই জানেন তিনি। সে অনুযায়ী অবসর সময়ে যত্নও নেন।

প্রকৌশলী শরীফুল হক বলেন, ‘আমি বিএমডিএ অফিসে চাকরি করি। অফিস শেষে যতটুকু সময় পাই সেই সময় এখানে ব্যয় করি। ভাল লাগে। আমার উদ্দেশ্য যেন কোন পতিত জায়গা যেন পরে না থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাদ কৃষিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। তার ধারাবাহিকতায় ১৮মাস পূর্বে রাজশাহী অফিসের নতুন বিল্ডিংয়ে বাহারি গাছের সমারোহে এই ছাদ বাগান গড়ে তুলা হয়।’

তিনি আরো বলেন,আমি আমার চাকরি জীবনে যেসব জায়গায় কাজ করেছি সেসব জায়গাতেও আমি বিভিন্ন সময়ে গড়ে তুলেছিলাম ছাদ বাগান। যেমন নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী রিজিওন অফিসের ছাদেও ছাদ বাগান গড়ে তুলেছিলেন । গাছের পাশাপাশি ছাদে রয়েছে ত্রিশ জোরা কবুতর। এই কবুতরের বিষ্ঠা ব্যবহার করা হয় সার হিসাবে। এছাড়া অফিসে বিভিন্ন সময় আমের খোসা টমেটোর ধোসা শসার খোসা, চায়ের পাতি যে সব খাবার জিনিস ফেলে দেয়া হয় তা সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় গাছের জন্য । এছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে ট্রান্সফরমারের খোল যা পরিত্যক্ত ফেলে দেওয়া হয় সেটিকে দিয়ে গাছের টব হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না ছাদ বাগানের জন্য। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছে ধরেছে। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ড্রাগন ফল, তরমুজ সহ বিভিন্ন ধরনেন ফল গাছে এসেছে।

গাছের প্রতি তার ভালবাসার বিষয়ে শরীফুল হক বলেন, শৈশব থেকেই গাছের প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগাই। এছাড়াও জীবনে যেসব অফিসে তিনি চাকরিরত অবস্থায় ছিলাম সে সব জায়গাতেও গাছ লাগিয়েছি। নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী রিজিওন অফিসের ছাদে গড়ে তুলেছি এক টুকরো সবুজ উদ্যান।

কিছুদিন আগেই তার অফিসের সহকর্মিদের নিয়ে ড্রাগন ফল তুলেছেন শরীফুল হক। সহকর্মীদের বিভিন্ন জন এমন উদ্যোগ দেখে তারা বলেন, শরীফুল হকের ছাদ বাগান আমাদের মুগ্ধ করেছে। বাগানে বিকেল থেকেই শুরু হয় নানান পাখি ও কবুতরের আনাগোনা। সবুজঘেরা প্রকৃতিতে পাখিদের মিষ্টি নানান শব্দ যেনো মন সকলের ভরিয়ে দেয়। সেই সাথে ছাদ বাগান গড়ে তোলার আগ্রহ জন্মেছে আমাদের মাঝে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *