আলিফ হোসেন

রাজশাহীর তানোরে ভুয়া সাংবাদিকদের প্রতারণার জাল ও চরম দৌরাত্ন্য জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘন করে আইপি টিভি ও অনলাইন টিভির নামে এরা পুরো এলাকায় প্রতারণার জাল বিস্তার এবং ওয়ার্ড, ইউপি,পৌরসভা বা উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। স্থানীয়রা জানান, নুরনগর টেলিভিশন, সন্ধান, টপ ,রঙিলা ও দুর্বার বাংলা ইত্যাদি নামে ফেসবুক পেইজ খুলে টেলিভিশন চ্যানেলের নামে প্রতারণা করছে। এরা ছাগল খোয়াড় দেয়া থেকে শুরু করে কুকুরের ঝগড়ার ভিডিও ধারণ করে তা এসব ফেসবুক পেইজে আপলোড দিয়ে টিভি চ্যানেলের নামে প্রচার করে। কোনটি আইপি টিভি, কোনটি অনলাইন টিভি,কোনটি স্যাটেলাইট টিভি সেই সম্পর্কে সিংহভাগ মানুষের কোনো ধারণা নাই। আর সাধারণ মানুষের এই অগ্গতাকে পুঁজি করে প্রতারক চক্র টেলিভিশন চ্যানেলের নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মুলধারার সাংবাদিকগণের নিদ্রিস্ট এলাকা থাকে তবে, এসব কথিত টেলিভিশন সাংবাদিকের কোনো নিদ্রিস্ট এলাকা নাই বরং নিজ এলাকায় এরা প্রতারক হিসেবে চিন্হিত এদের কোনো তৎপরতা নাই, এরা আশপাশের জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে টেলিভিশন সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করছে। কাঁকনহাট পৌরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, নুরনগর টেলিভিশনের নামে এক প্রতারক কাঁকনহাট পৌরসভার বিভিন্ন অনিয়ম-অনিয়ম দুর্নীতির খবর প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, পরে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন এই নামে কোনো টেলিভিশন নাই আর ওই সাংবাদিক যৌন উত্তেজক বড়ি বিক্রেতা। তিনি বলেন, এবার তাকে পেলে আটক করে পুলিশে দেয়া হবে। তাদের এসব অপকর্মের কারণে মুলধারার সাংবাদিকগণ প্রতিয়ত বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন। সচেতন মহল এসব কথিত (ভুয়া) টেলিভিশন সাংবাদিকদের বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, একশ্রেণীর ভুঁইফোড় অনলাইন টিভি ও অনলাইন পোর্টালের এক থেকে পাঁচ হাজার টাকায় সাংবাদিকের কার্ড কিনে পুরো উপজেলা চষে বেড়াচ্ছে প্রায় শতাধিক ভূয়া সাংবাদিক। একশ্রেণীর সংঘবদ্ধ এসব অসাধু চক্রের কাছ থেকে অনলাইন পত্রিকা ও অনলাইন টিভির কার্ড নিয়ে তারা যথেচ্ছা করে বেড়াচ্ছেন। অথচ এরা কেউ স্কুলের গন্ডিও পেরুতে পারেনি। অধিকাংশক্ষেত্রে ভুটভুটি চালক নরসুন্দর, মুচি, ছিচকে চোর ও মাদক ব্যবসায়ীরাও পিছিয়ে নেই কার্ড কিনে সাংবাদিক পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরা সাংবাদিক সেজে মোটরসাইকেলে প্রেস ও সাংবাদিক লিখে বোকা বানাচ্ছেন বিভিন্ন মহলকে। সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ পড়ে ছুটে যান অভিযুক্তদের কাছে। নানা উছিলায় তারা এসব মানুষের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের টাকা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। এদের দৌরাত্ন্য ও সাংবাদিক লেখা মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এদের গলায় রঙবেরঙের ব্যাগ, কোমরে হরেক রঙের বাহারী পরিচয়পত্র, হাতে নানা রঙ ও সাইজের মাইক্রোফোন ঝুলিয় তাদের বেশিরভাগই নতুন মোটরসাইকেলে চষে বেড়ায় পুরো এলাকা যেনো দেখার কেউ নেই। এদের বেশ-ভুষা দেখে দাপুটে সাংবাদিক মনে হলেও পরিচয়পত্র দেখলেই চোখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা। তাদের কারণে পেশাদার সাংবাদিকগণ রয়েছেন চরম বিপাকে।ট্রাফিক পুলিশ কিংবা চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরা পুরো উপজেলা চষে বেড়াচ্ছে। পুলিশ এদের গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না, গাড়ি চোরাই কিংবা ভারতীয় টানা কি না ইত্যাদি চেক করতে পারছেন না সাংবাদিকের সম্মানের কথা ভেবে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।

সুত্র জানায়, প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সম্পাদকীয় একটি নীতিমালা রয়েছে তবে এদের কর্মকান্ড সম্পাদকীয় নীতিমালার পরিপন্থী এমনকি এসব কথিত মিডিয়ার কোনো নীতিমালা নাই, তারা কার্ড বাণিজ্যে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব ভুঁইফোড় গণমাধ্যম ও তাদের নিয়োগকৃত ভুঁইফোঁড় সাংবাদিকদের বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। প্রিন্ট বা অনলাইন পোর্টালে কোন কথা লিখা যাবে, কোন কথা লিখা যাবে না, অথবা কোন ভিডিও চিত্র প্রকাশ করা যাবে আর কোন ভিডিও চিত্র প্রকাশ করা যাবে না সেই সম্পর্কে তাদের কোনো নুন্যতম ধারণা নাই। এরা মুঠোফোনে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় যেকোনো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে সেটি অনলাইন টিভি চ্যানেল বলে প্রচার করছে। কোনটি টিভি চ্যানেল, কোনটি অনলাইন টিভি, কোনটি ফেসবুক পেইজ এসব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন ধারণা নাই, আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর টাউট-বাটপার অনলাইন টিভি চ্যানেলের নাম ভাঙ্গিয়ে সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা করে চলেছে।তাদের প্রতারণার কারণে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকগণ চরম বিপাকে পড়েছে। কারণ টিভি চ্যানেলে সংবাদের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রচার করা, তাই সব ঘটনা প্রচার করা সম্ভব হয় না। কিন্ত্ত একশ্রেণীর এসব টাউট-বাটপার মুঠোফোনে যেকোনো ঘটনার ভিডিও করে তা ফেসবুক পেইজে শেয়ার করে টিভি চ্যানেল বলে প্রচার করে সাধারন মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। আবার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, জনপ্রতিনিধি ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাক্ষাৎকার নিয়ে টিভি চ্যানেলে প্রচারের প্রলোভন দেখিয়ে এসব কথিত অনলাইন টিভি নামের ফেসবুক পেইজে প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন যারা স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি তারা টিভি সাংবাদিক, প্রকাশক, সম্পাদক ইত্যাদি হয় কি ? ভাবে তবে কি টিভি সাংবাদিক প্রকাশক-সম্পাদক ইত্যাদি এসব হতে লেখাপড়ার কোনো প্রয়োজন নাই হায়রে সাংবাদিক হায়রে সাংবাদিকতা।

জানা যায়, উপজেলায় প্রায় শতাধিক কথিত সাংবাদিকদের পকেটে নামসর্বস্ব ভুঁইফোঁড় অনলাইন টিভি-নিউজপোর্টাল ও পত্রিকার কার্ড রয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ অসাধুচক্র এক থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এসব কার্ড বিক্রি করছে। তাদের অর্থলিপ্সতায় বেড়ে চলেছে ভুয়া সাংবাদিকের সংখ্যা। সংশ্লিষ্ট অনলাইন টিভি বা পত্রিকা অফিস না জানলেও সংবাদ বন্ধ বা সংবাদ প্রকাশের নামে তারা ব্লাকমেইল করছেন। অথচ সাংবাদিক না হয়েও মনগড়া অনলাইনের কার্ড বানিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছে এবং সংবাদের নামে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে স্মার্টফোন পুঁজি করে। আবার কেউ সম্পাদক, কেউ প্রকাশক, কেউ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কেউ চিফ রিপোর্টার কেউ বার্তা সম্পাদক হয়েছে অথচ এরা কেউ স্কুলের গন্ডিই পেরুতে পারেনি তাহলে এরা এসব পদে অধিস্ট হয় কি ভাবে ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ একশ্রেণীর এসব টাউট-বাটপারদের কারণে পেশাদার সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার মুখে পড়ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *