মাদার বখ্শ কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

রাজশাহীর মাদার বখ্শ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ সালমা শাহাদাতসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নানা অনিয়মের মাধ্যমে ও বিধি বহির্ভূতভাবে তারা প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো- সংশ্লিষ্ট পদে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি না থাকলেও একাধিক শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি আজো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পূর্ণ হতে চললেও বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি করা হয়নি। পরষ্পর যোগসাজসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি এতোদিন গোপন রেখেছিলেন। সম্প্রতি বিষয়টি ফাঁস হয়েছে।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক স্বাক্ষরিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক এসএম খায়রুল কবীর ১৯৯৬ সালের ২ জুন তারিখে যোগদান করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ এমপিওভুক্ত হন তিনি। তার শিক্ষা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ যাচাইয়ে দেখা যায় তিনি প্রাণ রসায়ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ। কিন্তু খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ে তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সনদ না থাকায় তার নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি। ফলে তিনি সরকারি বেতন ভাতা পাবেন না এবং তৎকর্তৃক ০১-০৩-১৯৯৭ তারিখ থেকে ০৩-০২-২০১০ তারিখ পর্যন্ত গৃহীত ৯ লাখ ৭ হাজার ৭১৩ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য। আর খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ থাকায় তার এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
এতে আরো জানা গেছে, কম্পিউটার বিষয়ের প্রভাষক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক ও গ্রন্থাগারিক হাসিবা খাতুনের নিয়োগকালে তাদের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিল না। তার পরেও তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদেরও বেতনভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য বলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রিলেটেড আর্ট বিষয়ের প্রভাষক কামরুন নাহারের নিয়োগেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সালমা শাহাদাতের ব্যাপারে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- তিনি (অধ্যক্ষ) ২০০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এরআগে ২০০৩ সালের ১২ মে তিনি উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন। পরিদর্শনকালে তার উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড প্রদর্শন করতে পারেননি। অধিদফতর হতে প্রেরিত পরিদর্শন বিবরণী ও সংযোজনীতে (নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য) তার উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রদান করেননি। তাই অবিলম্বে তার উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র প্রদর্শন করার কথা বলা হয়েছে।
সালমা শাহাদাতের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ আদৌ বিধি সম্মত হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক। তারা বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আপত্তি থাকা সত্বেও অভিযুক্ত একাধিক শিক্ষকের পদোন্নতি কিভাবে হলো সে বিষয়টিও যাচাই ও খতিয়ে দেখা দরকার বলে তারা মনে করেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক এসএম খায়রুল কবীর বলেন, আপনার সাথে সাক্ষাত করে কথা বলব বলেই ফোন কেটে দেন। তবে অভিযুক্ত অন্য শিক্ষকদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সালমা শাহাদাতের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা জানান তিনি।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এ ব্যাপারে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *