আলিফ হোসেন,তানোরঃ

রাজশাহীর তানোরের সীমান্ত সংলগ্ন মোহনপুর উপজেলার মৌপাড়া দাখিল মাদরাসার অফিস কক্ষ রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে মাদরাসার অফিস কক্ষে রহস্যজনকভাবে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও ৩টি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন আসবাব পুড়ে ছাই হয়েছে, এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে। এটা কি কোনো দুষ্কৃতকারী করেছে, শর্টসার্কিট থেকে হয়েছে, না কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ধাঁমাচাপা দিতে মাদরাসার কেউ করেছে ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন উঠেছে সাধারণের মনে, বইছে মুখরুচোক নানা গুঞ্জন। তবে শর্টসার্কিট থেকে মাদরাসার অফিস কক্ষে আগুনের সূত্রপাত বলে ঘটনাস্থল পরির্দশন শেষে দাবি করেছে পুলিশ।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দাবি গত শনিবার গভীর রাতে মৌপাড়া দাখিল মাদরাসার অফিস কক্ষে আগুন দেয় কয়েকজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। এলাকার পান বরজে নিয়মিত মাদকের আসর বসাত তারা। অগ্নিকান্ডের দিন তারা মাদরাসার আশপাশেই ছিল। রাতে নৈশপ্রহরী ডিউটি করলেও তিনি কিছুক্ষণের জন্য মাদরাসা চত্বরে ছিলেন না। সেই সুযোগে অফিসের জানালার কাঁচ ভেঙে আগুন দেয় মাদকসেবীরা। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের দাবি প্রতিদিন অফিস শেষে বৈদ্যুতিক মিটার চেক করে মেইন সুইচ বন্ধ করা হয়। বৃহস্পতিবারও মেইন সুইচ বন্ধ করে অফিস ত্যাগ করেন পিয়ন। সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া অগ্নিকান্ডের পর মাদরাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ছিল। এছাড়াও স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বৈদ্যুতিক কোনো ক্রটি পাননি। কিন্তু ভাঙা ছিল অফিসের জানালার কাঁচ। ঘটনাটি এতেই পরিষ্কার।

এদিকে অগ্নিকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দুস্কৃতকারিদের কাজ বলে দাবি করেছেন। তবে অনেকে বলছে, দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করবেন কেনো এতে তাদের ফায়দা কি ? তারা চুরি করতে পারেন, তাছাড়া কি এমন হলো যে এতোদিন পর দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করে মাদরাসার ক্ষতিসাধন করবে। ঘটনার দিন নৈশপ্রহরী ডিউটি করছিলেন কিছু সময়ের জন্য তিনি ছিলেন না এই সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে, কর্তৃপক্ষের এই দাবি কতোটা বিশ্বাসযোগ্য ? আবার অনেকে বলছে, কর্তৃপক্ষ যদি জানতেন মাদরাসার পাশে মাদকাসক্তরা গভীর রাতে মাদকের আসর বসায়, তাদের দ্বারা মাদরাসার ক্ষতি হতে পারে, তাহলে তারা এমন আশঙ্কার কথা পুলিশকে জানাননি কেনো। তাছাড়া স্থানীয়রা এমন ঘটনার কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আবার কেউ কেউ বলছে, মাদরাসার নিয়োগ বাণিজ্য ও সম্পদের হিসেব নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথা মানুষের মুখে মুখে আলোচনা রয়েছে, তাই এসব ঘটনা ধাঁমাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে মাদরাসার সুপার এমন অনৈতিক কাজ করতে পারেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মৌপাড়া দাখিল মাদরাসার সুপার দেরাজ উদ্দিন বলেন, এটা দুষ্কৃতকারীদের কাজ। তিনি বলেন, অগ্নিকান্ডে অফিসে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ৩টি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার। মূল্যবান কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় তারা বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে মোহনপুর থানার অফিসার ইন্চার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *