জুয়েল আহমেদ :
রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর বালুঘাটে বালুবাহী ট্রাকপ্রতি টোল আদায়ের জন্য ইজারা দিয়েছে কাটাখালী পৌরসভা। প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমের জন্য পৌরসভা কর্তৃক বালু ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার মেয়রের সাথে পরষ্পর যোগসাজসের মাধ্যমে ইজারাদার বিধিবহির্ভূতভাবে ফাঁকা রসিদে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন। ট্রাক প্রতি ৬০ টাকা করে টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। এতে করে ট্রাক মালিক, বালু গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছে টোল আদায়কারী ইজারাদার ও পৌর কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ চলতি মৌসুমের জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে শ্যামপুর বালুঘাট থেকে বালুবাহী ট্রাকপ্রতি টোল আদায়ের জন্য ইজারা দিয়েছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ী যৌথভাবে ইজারা নিয়েছেন। ইজারাদারদের মধ্যে পৌরসভার মেয়র আনোয়ার সাদাত নান্নুও রয়েছেন। পৌরসভা থেকে বালুবাহী ট্রাকপ্রতি ৬০ টাকা করে টোল আদায়ের জন্য ইজারাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আদায় করা হচ্ছে ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা করে। প্রতিদিন শতশত বালুবাহীট্রাক থেকে এই অতিরিক্ত টোল আদায়

করা হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত, বিধিবহির্ভূত ও বেআইনভাবে এই টোল আদায় করা হলেও সরকারি প্রশাসন নীরব রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ট্রাক মালিক, বালু গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

৩০ বছর ধরে বালু ব্যবসা করছেন নগরীর হাদির মোড় এলাকার মো. মামুন। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, বালু বিক্রি করে প্রতি ট্রাকপ্রতি লাভ থাকে ৫০ থেকে দেড়শ’ টাকা। তবে শ্যামপুর বালুমহালে ট্রাক থেকে অতিরিক্ত টোল নেয়ার কারণে আর লাভ থাকছে না।তিনি আরো বলেন, বালুর দাম বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায়, আবার স্বাভাবিক মৌসুমে বালু পর্যাপ্ত পরিমাণে উঠলে দাম কমে। কিন্তু টোল কোনো মৌসুমেই কমে না। এবার ইজারাদার ইচ্ছামতো টোলের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। এ নিয়ে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রও কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।

অপর বালু ব্যবসায়ী সুজন বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন বিল্ডিং খুঁজে খুঁজে বালুর কাস্টমার বের করি। তারপর তাদের বালু সরবরাহ করি। এতে ট্রাকপ্রতি লাভ থাকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। তবে অতিরিক্ত টোল দিতে গিয়ে এখন আর লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না।

সাব ইজারাদার জনি ইসলাম জানান, এই ঘাটটি টোল আদায়ের জন্য প্রথমে ইজারা পায় নিতি ট্রেডার্সের প্রোপাইটর রিপন ইসলাম। পরে তিনিসহ (জনি) কয়েকজন যৌথভাবে রিপনের কাছ থেকে ঘাটটির ইজারা গ্রহণ করেন। তবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনোয়ার সাদাত নান্নু বলেন, বালুবাহী ট্রাক যাতায়াতের কারণে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অতিরিক্ত টোলের টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করা হয়। অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, এই টোল কমানো সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *