জুয়েল আহমেদ :
রাজশাহীতে নগরীর মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির চতুর্থ তলার ছাদ থেকে নাইমুল ইসলাম ওরফে রিয়াদ (২০) নামে এক তরুণকে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দুই পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড- করা হয়েছে।

ঘটনার দিন বুধবার রাতেই তাদের সাসপেন্ড করা হয়।যাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তারা হলেন- মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হায়দার আলী ও কনস্টেবল রায়হান। সদ্য সাসপেন্ড- হওয়া মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হায়দার আলী নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, বুধবার দুপুরের দিকে রিয়াদকে আটক করে নগরীর মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।

পুলিশের দাবি, বিকেলে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির বারান্দা থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে রিয়াজ আহত হয়। আর আটক রিয়াজের বাবা নজরুল ইসলামের দাবি, পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তার ছেলেকে পুলিশ ফাঁড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

এ নিয়ে পুলিশ ও আহত রিয়াজের বাবা নজরুল ইসলামের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে ঘটনাটি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে।বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, হেরোইনসহ রিয়াজকে আটক করে মালোপাড়া ফাঁড়ির পুলিশ। পরে তাকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ঠিকানা লেখানোর সময় সে পালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ আবারো তাকে ধরে ফেলে। তবে লাফিয়ে পাশের একতলার ছাদে পড়ে সে গুরুতর আহত হয়।

আহত রিয়াজের বাবা নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলের জন্য নিউমার্কেট ফুডপান্ডাতে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল। বুধবার সেখানে তার ট্রেনিং ছিল। আমি তাকে নিয়ে ফুডপান্ডায় যাই। বেলা সোয়া ১১টার দিকে আমার ছেলে আমাকে বলে ‘আব্বু আমি বাইক নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি, দ্রুত চলে আসব।’ এই বলে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে যায়। পরে দুপুর ১২টায় আমাকে ফোন করে বলে ‘আব্বু আমাকে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই বাবর ও কনস্টেবল রায়হান ধরে নিয়ে এসেছে। তারা আমার পকেটে কী যেন ঢুকিয়ে দিয়েছে। বলছে, তোর বাড়ির লোক ডাক।’ আমার ছেলের এমন কথায় আমি দ্রুত মালোপাড়া ফাঁড়িতে যাই।



সেখানে এটিএসআই বাবর ও কনস্টেবল রায়হান বলেন, আপনার ছেলের পকেটে মাদক পাওয়া গেছে। ছাড়াতে হলে ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসেন। আমি টাকা দিতে অপারগতা জানালে তারা বলেন কিভাবে টাকা ম্যানেজ করবেন আপনি বোঝেন। আপনার ছেলেকে সাইজ করতে চারতলায় নিয়ে যাচ্ছি। এরপর আমি সেখান থেকে টাকা ম্যানেজ করতে আমার বাড়ি চলে আসি।নজরুল ইসলাম আরো বলেন, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এটিএসআই বাবর আমাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে বলেন, দ্রুত রামেক হাসপাতালে আসেন। আপনার ছেলে ছাদ থেকে নিচে লাফ দিয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি পুলিশ আমার ছেলেকে ঘিরে রেখেছে। তিনি বলেন, আমার ছেলের কোমর, পা, হাত ভেঙে গেছে। মাথা ফেটে ক্ষত হয়েছে এবং ব্যাপক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রিয়াজের বাবা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে চারতলা থেকে নিচে লাফ দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিয়াজ বলে, ‘পুলিশের মারধরে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কিভাবে চারতলা থেকে নিচে পড়লাম বলতে পারব না।’ বলেই আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।

জানতে চাইলে এটিএসআই বাবর বলেন, আমরা রামেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে ব্যস্ত আছি। পরে বিস্তারিত জানাব।

মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার আলী জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিয়াজকে চারতলায় নিয়ে যায় এটিএসআই বাবর ও কনস্টেবল রায়হান। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পানি খেতে চায়। তার জন্য পানি নিয়ে আসার পর দেখা যায় রিয়াজ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাশের বাড়ির এক তলার ছাদে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সাথে সাথে তাকে নিয়ে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পুলিশ ফাঁড়ির ছাদ থেকে রিয়াদকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন হায়দার আলী। তিনি বলেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়।

নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম তিনি জানান, ‘দুপুরের দিকে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির একটি টহল দল ওই যুবককে মাদকসহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। ফাঁড়িতে নিয়ে নাম- ঠিকানা লেখার সময় ওই যুবক দৌড়ে চার তলার ছাদে উঠে টপকে বেলকনির পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। ওই সময় নিচে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নেন। পুলিশ পাহারায় তার চিকিৎসা চলছে।

কি করে ওই যুবক ছাদে গেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘মালোপাড়া ফাঁড়ির পুলিশের অসর্তকতার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।’

অভিযুক্ত যুবকের বাবার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার বাবার অভিযোগ সঠিক নয়।’ অভিযুক্ত যুবকের বিষয়ে কি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *