জেলা প্রতিনিধি::

লিবিয়ার মাফিয়া দালাল আলী হোসেনের নির্যাতনের শিকার হয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা পশ্চিম হাটি গ্রামের কৃষক তরিকুল মিয়ার ছেলে মোঃ এখওয়ান মিয়ার লাশ তিন মাস পর লিবিয়া থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ীতে পৌছেছে একই গ্রামের মাফিয়া দালাল আলী হোসেন গংদের নির্যাতনের শিকার হয়ে। সোানর হরিন ধরার স্বপ্নঁ নিয়ে মোঃ এখওয়ান মিয়া একই গ্রামের দালাল আলী হোসেনের মাধ্যমে ইউরোপে যাবার জন্য সহায় সম্বল বিক্রি করে পাড়ি জমান লিবিয়াতে। পরে তাকে নেওযা হবে ইউরোপের ইটালীতে। পরে স্বপ্নঁ পূরনের আগেই লিবিয়াতে মাফিয়াদের নির্যাতনে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো তাকে।
পারিবাকির সূত্রে জানা যায় শ্রীধরপাশা গ্রামের লিবিয়ায় অবস্থানরত মাফিয়া ডন খ্যাত আলী হোসেনের পিতা আবুল মিয়া, তার মা আছমা বেগম, এবং দৌলতপুর গ্রামের ছালেহ আহমেদ প্রায় ১৫ মাস আগে ইউরোপ নেবার প্রলোভন দেখিয়ে ধাপে ধাপে তরিকুল মিয়ার পরিবারের কাছ থেকে প্রায় উনিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মাফিয়া গং আলী হোসেন গংরা। কখনো গেইমে তুলবে, কখনো মাফিয়ার কাছে ধরা পড়েছে এরকম নানান অজুহাত দেখিয়ে নিরীহ তরিকুল মিয়ার পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় সে।
কিন্ত প্রথম দফা টাকা নেবার পর দ্বিতীয় দফায় আরো টাকা দেশ থেকে আনার জন্য ইখওয়ান মিয়াকে দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে লিবিয়ায় অবস্থানকারী মাফিয়া দালাল আলী হোসেন।

যার ফলে দফায় দফায় প্রায় উনিশ লাখ টাকা পরিশোধ করতে জমিজমা ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে আরো অনেক টাকা ঋন করতে হয় ইখওয়ানের পরিবারকে। কিন্তু টাকা নেবার পরেও বিভিন্ন অজুহাতে আরো টাকা পাঠানোর জন্য ইখওয়ান মিয়াকে চাপ দিলে আর টাকা দিতে ইখওয়ান মিয়া অস্বীকৃতি জানায় যার ফলে তার উপরে চালানো হয় নির্যাতনের স্টীম রোলার। ভয়াবহ এমন নির্যাতন সইতে না পেরে দিনের পর দিন শারীরিক নির্যাতন ও অনাহারে থাকার কারণে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে ইখওয়ানের। শরীরের মাংস শুকিয়ে চামড়া হাড্ডির সাথে লেগে যায়। পরবর্তীতে আলী হোসেন গঙ মাফিয়াদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লিবিয়াতে দাল ইখওয়ান তিনমাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। এক পর্যায়ে গত তিন মাস আগে খবর আসে ইখওয়ান মিয়া মারা গেছেন। অনেক চেষ্টা আর তদবিরের পর প্রায় তিন মাস পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইখওয়ানের লাশ বাড়ীতে পাঠানো হলে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের অবতারণা হয। ঐদিন বিকেলে স্থানীয় জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা শাহী ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়#। এ ঘটনায় এলাকায় শোকাবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এদিকে একই গ্রামের আরো কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান- ইউরোপের পাঠানোর কথা বলে দালাল আলী হোসেন তাদের কাছ থেকেও ধাপে ধাপে ৩২ লাখ, কারো কাছ থেকে ২২ লাখ, কারো কাছ থেকে ১৭ লাখ এভাবে শ্রীধর পাশা এলাকা সহ অন্যান্য এলাকার ইউরোপ যাত্রীদের পরিবারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলী হোসেন গংরা। কিন্তু নিজের সন্তান মাফিয়া চক্রের হাতে অবস্থান করায় নির্যাতনের ভয়ে তারা কেউ আইনের আশ্রয় নেননি বলে তারা জানান।
ইখওয়ানের লাশ বাড়িতে আসার পর লিবিয়াতে অবস্থানকারী একই গ্রামের মাফিয়া দালাল আলী হোসেনের নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী সবাই তার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে নিহত লিবিয়া ফেরত এখওয়ানের কৃষক পিতা তরিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান,আামর গ্রামের মাফিয়া দালাল আলী হোসেন আমার সহজ সরল ছেলেকে ইউরোপের দেশে পাঠাবে বলে আশ্বস্থ করে তাই তার কথামতো সরল বিশ্বাসে জায়গা জমি বিক্রি করে ১৯ লাখ টাকা তার পিতামাতার হাতে তুলে দেই। সে আমার ছেলেকে লিবিয়া নিয়ে আরো টাকার জন্য দিনরাত শারীরিক নির্যাতন চালায় । পরে আমি আরো তিন লাখ টাকার উপরে পাঠাইয়া দেই যেন আমার ছেলের উপর আর নির্যাতন না করে। শেষ পর্যন্ত আমার ছেলের উপর শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়ে তিনমাস আগে আমাের আদরের ধনকে হত্যা করে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আমাদের অনুরোধে মাফিয়া ডন আলী হোসেন গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ছেলের লাশ বাড়িতে পাঠাইয়া দিল। আমি এই মাফিয়া ডন আলী হোসেনের ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি সরকারের নিকট।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে লিবিয়া ফেরত এখওয়ান মিয়ার লাশ দেশের গ্রামের বাড়িতে আসার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,অভিযোগ পেলে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *